বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০১৬

ইসলাম শান্তির পক্ষে: খেলাফত মজলিসের সেমিনারে ড. এমাজউদ্দীন

ইসলামে চরমপন্থার কোন স্থান নেইঃ ড. আহমদ আবদুল কাদের

ঢাকা, ২ জানুয়ারী ২০১৬ঃ বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, কুরআন- হাদীস তথা ইসলাম শান্তির পক্ষে। আমাদেরকে সর্বসাধারণের বোধগম্য করে তা উপস্থাপন করতে হবে। সভা- সেমনিার, ওয়াজ নসিহত, মসজিদের খুতবায় তা উপস্থাপন করতে হবে। এ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে৭০০ কোটি আর মুসলমানদের সংখ্যা হবে প্রায় ২৫০ কোটি। এ অবস্থায় মুসলমানদের নামের সাথেterrorism বা সন্ত্রাসী শব্দটি impose বা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ইসলাম সম্পর্কে কারো কারো যে অনীহা রয়েছে তা দূর করতে হবে। বিশশতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বৃটেনের ন্যাট্যাকার জর্জ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের পরে বলেছিলেন যে, এই মুহূর্তে পৃথিবেিত ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছেন মুহাম্মদ (সা.)। যিনি এখন বেঁচে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ বর্তমান আছে।
ড. এমাজউদ্দীন, সন্ত্রাস দমনে শিক্ষায় নৈতিকতা সন্নিবেশিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। শান্তিপূর্ণভাবে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালনার জন্যে পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান মদিনার সনদের অনুসরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি গ্রাহাম ই ফুলারের ‘ওয়াল্ড উইদাউট ইসলাম’ পুস্তকের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, উৎকৃষ্ট লেখার মাধ্যমে তার ঐ নিকৃষ্ট উপস্থাপনার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
audianceখেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ‘সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী সা. এর জীবনাদর্শ’ শীর্ষক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বিকাল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে ঢাকা মহানগরী সভাপতি শেখ গোলাম আসগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন খেলাফত মজলিসের মাহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাদ্রাসায়ে দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকত আলী।
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হকের পরিচালনায় মাহে রবিউল আঊয়াল উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সোমিনারে আলোচনা পেশ করেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, মাওলানা সৈয়দ ফেরদাউস বিন ইসহাক(সাহেবজাদা, চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব(রাহঃ), জামিয়া শারিয়্যাহ মালিবাগ ও নয়াটোলা কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিস নেতা অধ্যাপক আবদুল হালিম, এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল, আমিনুর রহমান ফিরোজ, ডাঃ রিফাত হোসেন মালিক, তাওহিদুল ইসলাম তুহিন, ছাত্র নেতা সেলিম হোসাইন, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হাফিজ খসরু, ইলিয়াস হোসাইন প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসের অপবাদ দেয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইল হত্যাযঞ্জ চালানো হচ্ছে অথচ ফিলিস্তিনীরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তাকে সন্ত্রাস বলা হচ্ছে। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসের মূল কারণ হচ্ছে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র। পরিকল্পিতভাবে ইহুদীবাদী ইসরাইল উস্কানী দিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আজ হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসারাইলী আগ্রাসন, সিরিয়ার একনায়ক বাশারের দমনঅভিযান, মিসরের সামরিকশাসক সিসি’র দমন নীতি বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ব্যাপকভাবে সমাজে তুলে ধরতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ইসলাম যে এক মানবিক শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ইসলাম যে সব ধরনের অশান্তি ও সন্ত্রাসের বিরোধী সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। আইনানুগ পন্থা ছাড়া যে কোন মানুষকে হত্যা করা যায় নাÑ এ যে ইসলামের সম্পূর্ণ খেলাপ তা তুলে ধরতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া যে কোন ব্যক্তির হাতে আইন তুলে নেয়ার যে কোন সুযোগ নেই সে ব্যাপারেও মানুষকে সচেতন করতে হবে। ইসলামে যে চরমপন্থার কোন স্থান নেই-চরম পন্থা যে ধ্বংস ডেকে আনে তাও পরিষ্কারভাবে তরুনদের জানাতে হবে। বিশেষভাবে আলেম সমাজকে এসব বিষয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করতে হবে। হক্বানী ওলামায়ে কেরামই তরুনদের মাঝে এসব ব্যাপারে সত্যিকার জ্ঞান দিতে পারেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনের নামে নির্বিচার হত্যা, জুলুম নির্যাতন সন্ত্রাস বন্ধে কোন কার্যকর পন্থা নয়। নির্বিচার হত্যা জুলুম নির্বাতন মানুষকে প্রতিশোধ পরায়ন করে তুলে। দেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে সরকারকে আরো বেশী সচেতন হতে হবে বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনের নামে নির্বিচারে অত্যাচার অনাচার পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে সরকারের ভূমিকাও অনেক সময় সন্ত্রাসের জন্ম দিতে পারে। সর্বোপরি সুশাসনই সন্ত্রাস দমনের চাবিকাঠি।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে ঢাকার মাদ্রাসায়ে দারুর রাসাদেও শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ইসলামের নামে সন্ত্রাসের পিছনে আছে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ও চরমপন্থী- হটকারী মনোভাব, নির্বিচারে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন এবং তজ্জনিত ক্ষোভ, বিশ^জোড়া ইসলামের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং মুসলিম বিশে^ স্বৈরাচারী সরকারসমুহের দমন নীতি ও এর প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অব্যাহত সমর্থন। অতীতে বিভ্রান্ত খারেজী গোষ্ঠী ধর্মের কথা বলে মুসলিম বিশে^ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছিল। বর্তমানেও কোন কোন গোষ্ঠী ধর্মের নামেই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে নিরিহ মানুষকে হত্যা করছে। অথচ কুরআন-হাদিস তথা মহানবীর(সা.)জীবনাদর্শের সঙ্গে এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আল্লাহ পাকের অপরুপ সৌন্দর্যে সাজানো এ শান্ত, স্নিগ্ধ পৃথিবীতে মানুষ যেন সুখে, শান্তিতে বাস করতে পারে, গুটি কয়েক দুর্বৃত্ত দুরাচারের কারণে সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষের জীবন যেন দুর্বিসহ হয়ে না ওঠে, সে জন্য মহানবী(সা.) ছিলেন সদা তৎপর। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেই তিনি সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামক এক শান্তি সংঘ গঠনসহ বহুবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। নবুওয়াত লাভের পর সরাসরি আল্লাহ পাকের নির্দেশ পেয়ে সকল প্রকার অন্যায় ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীপ্তকন্ঠে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং পরিশেষে শান্তির শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি মানবিক ও নৈতিকমান সম্পন্ন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন।
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান বলেন, আলেম-ওলামাসহ দেশের নাগরিকদের উপর সরকারের দমন নিপিড়ন বন্ধ করতে হবে। ইসলাম কখনো সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সমর্থন করে না। ইসলামের শান্তির বাণীই জুলুম সন্ত্রাস বন্ধের একমাত্র পথ।
মাওলানা শফিক উদ্দিন বলেন, মুসলমানদের হাতে আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন সেই সম্পদ লুন্ঠন করার জন্যে বিশ্বব্যাপী মুসলামানদেও উপর আক্রমন চালানো হচ্ছে। রিপোর্টার আলোক চিএ সাকিব আহমদ মুছা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন