রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

আল্লাহ কী আছে? সাকিব আহমদ মুছা'র বিতর্ক

সম্পাদক নোট: ব্লগার সাংবাদিক সাকিব আহমদ মুছার ‘আল্লাহ কী আছে? সাকিব আহমদ মুছা'র বিতর্ক’ প্রবন্ধটি তার নিজ ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশ করা হলো। 

আল্লাহের অস্তিত্ব নিয়ে হইহল্লা এবং ঝগড়া ফ্যাসাদ আস্তিক এবং নাস্তিকেরা করে আসছেন সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই। আস্তিকেরা যেমন সর্বশক্তিমান আল্লাহের অস্তিত্বের স্বপক্ষে সাফাই গেয়ে গেছেন গদগদ ভক্তিভরে, ঠিক একইভাবে নাস্তিকেরাও দ্বিধাহীন চিত্তে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন সেই সর্বশক্তিমানকে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আল্লাহ যদি সত্যি যদি থেকে থাকেন, তবে একমাত্র তিনিই পারেন এই বিতর্কের উত্তপ্ত আগুনে জল ঢেলে দিতে। কিন্তু অসীম শক্তিমান আল্লাহের মনে হয় সেই আগ্রহটুকু বিন্দুমাত্রও নেই।

সুপ্রাচীনকালে মানুষের জন্যে কিছু রূপক গ্রন্থ টুপ করে মর্তধামে ফেলে দিয়ে তিনি যে কোথায় অদৃশ্য হয়েছেন কে জানে।  তন্ন তন্ন করে হারিকেন দিয়ে খুঁজেও তার টিকিরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না আর কোথাও। এতে অবশ্য বিশ্বাসীদের তেমন কোন সমস্যা নেই। তিনি থাকলেও তারা বিশ্বাস করবে যে তিনি আছেন, না থাকলেও তিনি আছেন বলেই বিশ্বাস করে যাবে তারা। যত সমস্যা ওই গোড়া নাস্তিকদের নিয়ে। জ্বলন্ত প্রমাণ ছাড়া আর কোন কিছুতেই বিশ্বাস নেই তাদের। তবে নাস্তিকদের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হচ্ছে যে, তারা আস্তিকদের মত আল্লাহ না বিশ্বাসে অন্ধের মত আটকে নেই। আল্লাহের না বিশ্বাস মূলত আল্লাহের স্বপক্ষে প্রমাণের অভাবের কারণে হয়েছে। কাজেই, কোন এক শুভক্ষণে যদি আল্লাহের সুমতি হয় এবং তিনি ভাবেন যে, যাই একটু দেখা দিয়ে আসি নাস্তিক ব্যাটাদের। ওরা নাকি বড় গলায় বলে বেড়ায় আমি নেই। এখন দেখুক আমি আছি কি নেই। আমি সত্যি কি মিথ্যা। সেক্ষেত্রে আমার ধারনা, কোন নাস্তিক, তা সে যতই গোড়া নাস্তিক হোক না কেন, কোনরকম আর গাঁইগুই করবে না আল্লাহ নেই বলে।  প্রমাণ প্রমাণ বলেইতো যত চেঁচামেচি তাদের। কাজেই আল্লাহ-কে চাক্ষুস দেখার পর নিশ্চয়ই আর কোন প্রমাণ বাকী থাকবে না তাদের কাছে।

তবে কথা হচ্ছে যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহের এই সামান্য সদিচ্ছা এবং সুমতির অভাবের কারণেই তার অস্তিত্ব বিষয়ক বিতর্ক এখনো কই মাছের মতো জিইয়ে আছে মানুষের মধ্যে। যত্রতত্র আস্তিক এবং নাস্তিকেরা অদৃশ্য আল্লাহ-কে নিয়ে গলা ফাটিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে যাচ্ছে অহরহ। কিন্তু এই বিতর্ক খুব কম সময়ই সুনির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় সমান সুযোগ সুবিধা নিয়ে সমতল ভূমিতে হয়েছে। যে যার মত নিজের আঙ্গিনায় লম্ফঝম্প করে চলেছেন আস্তিক এবং নাস্তিকেরা। আস্তিকেরা তাদের বিপুল সংখ্যাধিক্য এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আনুকূল্য পেয়ে ইতিহাসের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই নাস্তিকদেরকে বেশ একহাত নিয়ে ছেড়েছে। অন্যদিকে, সংখ্যায় কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান এবং যুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে নাস্তিকেরাও কম ঘোল খাওয়ায়নি আস্তিকদের, কম নাজেহাল করেনি বেচারাদের।

সুনির্দিষ্ট কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কোন বিতর্কই যে েকেবারেই হয়নি তা অবশ্য নয়। 

আমার ভয়াবহ অপছন্দের কাজের মধ্যে অনুবাদ অন্যতম। পারতপক্ষে কোন ধরনের অনুবাদ করার কোন ইচ্ছাই কখনো আমার হয়নি। বড্ড গ্যাড়াকলের কাজ এই অনুবাদ। অনেক হ্যাপা এর। আমার মত আলসে মানুষের জন্যে সে হ্যাপা আরো বেশি। ন্যাড়া নাকি একবারই গাংগের পাড় যায়। কথাটা যে সত্যি না তা নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারছি। একবার নিলয় বাবুর পাল্লায় পড়ে গাংগের পাড় গিয়েছিলাম।

অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি মুক্ত পথ বেছে নেবার চেষ্টা করেছি। বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে বিতর্কটি মিহি, কোমল এবং মসৃনভাবে উপস্থাপনার জন্য যতখানি স্বাধীনতা নেবার প্রয়োজন বলে মনে করেছি ততখানিই নিয়েছি আমি। তারপরও লেখাটি কোথাও নিরস বা কাঠখোট্টা মনে হলে নির্দ্বিধায় আপনারা আপনাদের মন্তব্য জানাতে পারেন। আপনাদের সুচিন্তিত পরামর্শ পেলে আমার পক্ষে  অনুবাদ কর্মটিকে গতিশীল, পেলব, সহজবোধ্য এবং আকর্ষনীয় করা সহজতর হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন