সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে : -খুব চমৎকার এবং অতি প্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক সম্প্রতি বেশ জমে উঠেছে। বিতর্কের জন্মদাতা বাংলাদেশের একজন ডাকসাইটে মন্ত্রী জনাব নাসিম সাহেব।নজরুল জয়ন্তীর এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নজরুলের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন ‘জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক স্নেহ […]
মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬
নজরুল কেন আমাদের জাতীয় কবি ?
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে : -খুব চমৎকার এবং অতি প্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক সম্প্রতি বেশ জমে উঠেছে। বিতর্কের জন্মদাতা বাংলাদেশের একজন ডাকসাইটে মন্ত্রী জনাব নাসিম সাহেব।নজরুল জয়ন্তীর এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নজরুলের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন ‘জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক স্নেহ […]
মুহাম্মদ নিজেই এল্লাহ নামক সৃস্টিকর্তাকে বিশ্বাস করতো না
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে : -আসলে মুহাম্মদ নিজেই এল্লাহ নামক সৃস্টিকর্তাকে বিশ্বাস করতো না সে শুধু বিশ্বাস করত গনিমতের মাল আর যৌনদাসিতে,তাই সে বারংবার এল্লাহর দোহাই দিয়ে শুধু কিছু সরল মানুষের অন্তরে বিষ ঢেলে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে গেছে।না হলে পরকালে যখন এল্লাহ মুনাফিকদের কঠোর সাজা দেবেন বলেছেন তখন তাদের হত্যা করার দরকার কি! আসলে এল্লাহর আশায় বসে থাকলেতো আর আরাম আয়েশের জীবন যাপন করা যায় না।
“মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার জায়গায়” রেখে দেয়া কি “মাদ্রাসা প্রেম”? নাকি গরীবের বাচ্চাদের বিরুদ্ধে অভিজাতদের ষড়যন্ত্র?
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে : -
মাদ্রাসা শিক্ষাকে মুল ধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করার দাবীটি বহু পুরনো। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলো অন্তত গত তিন দশক ধরে দাবী করে আসছে, মদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন এবং একে ক্রমশ মুলধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করার কথা। এর প্রধান যুক্তিগুলো হচ্ছে –
– মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যুগোপযুগী শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা, যেনো তাঁদের মাঝে শ্রম বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষতা তৈরী হয়।
– একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজে অসমতা বা ইনিকুয়ালিটি হ্রাস করতে সহযোগিতা করবে
– মূলধারার শিক্ষায় বৃহত্তর ছাত্র সমাজের সাথে অংশ গ্রহনের ফলে এই ছাত্র ছাত্রীরা মূলধারার বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত হতে পারবে
– সর্বোপরি, এই সকল শিশুরা যেনো, আজকের অগ্রসর পৃথিবীর নানান বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে পারে
মাদ্রাসা শিক্ষাকে মুল ধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করার দাবীটি বহু পুরনো। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলো অন্তত গত তিন দশক ধরে দাবী করে আসছে, মদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন এবং একে ক্রমশ মুলধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করার কথা। এর প্রধান যুক্তিগুলো হচ্ছে –
– মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যুগোপযুগী শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা, যেনো তাঁদের মাঝে শ্রম বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষতা তৈরী হয়।
– একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজে অসমতা বা ইনিকুয়ালিটি হ্রাস করতে সহযোগিতা করবে
– মূলধারার শিক্ষায় বৃহত্তর ছাত্র সমাজের সাথে অংশ গ্রহনের ফলে এই ছাত্র ছাত্রীরা মূলধারার বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত হতে পারবে
– সর্বোপরি, এই সকল শিশুরা যেনো, আজকের অগ্রসর পৃথিবীর নানান বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে পারে
এখন, এই বিশাল ছাত্র গোষ্ঠীকে মূলধারার শিক্ষার সাথে একিভুত করার অর্থনৈতিক দায়টি রাস্ট্রের। বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলো সেই লক্ষেও কাজ করছে বহু বছর ধরে। রাস্ট্রের কাছে দাবী জানিয়েছে, শিক্ষার অর্থনৈতিক দায় যে রাস্ট্রকেই নিতে হবে, সে আন্দোলন আজও জারি আছে।
বলাই বাহুল্য, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রিক যে রাজনীতি বাংলাদেশে রয়েছে, সেই গোষ্ঠী এই ধরনের শিক্ষা আন্দোলনকে মাদ্রাসা শিক্ষা “ধংসের” আন্দোলোন বলে চিনহিত করে আসছে বহু বছর ধরেই। এরা এই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার আন্দোলন কে মাদ্রাসা ছাত্রদের “বিরুদ্ধে” বলে প্রচার করে থাকেন। অথচ, আজ পর্যন্ত, কোনও ছাত্র সংগঠন এ ধরনের কোনও দাবী তোলেনি যে মাদ্রাসা ছাত্রদের শিক্ষা তুলে দিতে হবে বা তাঁদের শিক্ষার অধিকার বাতিল করতে হবে। বরং এই সকল ছাত্র সংগঠন গুলো “শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার” এই দাবীতেই আন্দোলন করে যাচ্ছে গত চার – পাচ দশক ধরে। এই সকল সংগঠন যে শিক্ষার অধিকারের সংগ্রামে নিষ্ঠ সেখানে মাদ্রাসার সকল শিশুর শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নটিও যুক্ত। তুলনা করবার জন্যে দুটি ছবি তুলে দিলাম আপনাদের জন্যে। একটি মাদ্রাসার এবং একটি ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলের। বলুন তো একজন নৈতিক মানুষ হিসাবে, আমরা কি এই অসমতা কে সমর্থন করবো?
(বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র)
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়েছে হেফাজত এ ইসলামী এবং তাঁদের পোশাকী সমর্থকেরা। যদিও এই সকল পোশাকী “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের সন্তানেরা পড়াশুনা করেন শহরের সবচাইতে দামী ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে এই সকল মাদ্রাসা প্রেমিকদের সন্তানেরা চলে যান আমেরিকার, কিম্বা যুক্তরাজ্যের বা নিদেন পক্ষে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। এই সকল অভিজাত পোশাকী মাদ্রাসা প্রেমিকদের মুল লক্ষ্য হচ্ছে, মাদ্রাসা শিক্ষারথিদের কে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দাবীকে “মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে” বা “মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে” বলে প্রচার করা।
বলাই বাহুল্য, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রিক যে রাজনীতি বাংলাদেশে রয়েছে, সেই গোষ্ঠী এই ধরনের শিক্ষা আন্দোলনকে মাদ্রাসা শিক্ষা “ধংসের” আন্দোলোন বলে চিনহিত করে আসছে বহু বছর ধরেই। এরা এই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার আন্দোলন কে মাদ্রাসা ছাত্রদের “বিরুদ্ধে” বলে প্রচার করে থাকেন। অথচ, আজ পর্যন্ত, কোনও ছাত্র সংগঠন এ ধরনের কোনও দাবী তোলেনি যে মাদ্রাসা ছাত্রদের শিক্ষা তুলে দিতে হবে বা তাঁদের শিক্ষার অধিকার বাতিল করতে হবে। বরং এই সকল ছাত্র সংগঠন গুলো “শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার” এই দাবীতেই আন্দোলন করে যাচ্ছে গত চার – পাচ দশক ধরে। এই সকল সংগঠন যে শিক্ষার অধিকারের সংগ্রামে নিষ্ঠ সেখানে মাদ্রাসার সকল শিশুর শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নটিও যুক্ত। তুলনা করবার জন্যে দুটি ছবি তুলে দিলাম আপনাদের জন্যে। একটি মাদ্রাসার এবং একটি ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলের। বলুন তো একজন নৈতিক মানুষ হিসাবে, আমরা কি এই অসমতা কে সমর্থন করবো?
(বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র)
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়েছে হেফাজত এ ইসলামী এবং তাঁদের পোশাকী সমর্থকেরা। যদিও এই সকল পোশাকী “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের সন্তানেরা পড়াশুনা করেন শহরের সবচাইতে দামী ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে এই সকল মাদ্রাসা প্রেমিকদের সন্তানেরা চলে যান আমেরিকার, কিম্বা যুক্তরাজ্যের বা নিদেন পক্ষে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। এই সকল অভিজাত পোশাকী মাদ্রাসা প্রেমিকদের মুল লক্ষ্য হচ্ছে, মাদ্রাসা শিক্ষারথিদের কে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দাবীকে “মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে” বা “মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে” বলে প্রচার করা।
এই সকল পোশাকী মৌলবাদী দের দাবী হচ্ছে “মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গায় থাকতে দিন” ! এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ধরনের পোশাকী মৌলবাদীদের পোশাক খানিকটা খুলে এদের নগ্ন ঘিনঘিনে চেহারাটা খানিক্টা তুলে ধরা।
আমাদের দেশের ভদ্রলোক নাগরিকদের একটি অংশ মনে করেন “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার স্থানে থাকতে দেয়া উচিত”। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষা কে নিয়ে কোনও রকমের সংস্কার বা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন বিষয়ে কিছু বলা যাবেনা। এরা বলেন মাদ্রাসায় এদেশের দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা পড়ে, সুতরাং মাদ্রাসা থাকতে হবে। মাদ্রাসা না থাকলে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়বে? দরিদ্র মানুষের সন্তানদের শিক্ষার এই ধারনাটি খুব জনপ্রিয়, কিন্তু বাঙ্গালী উচ্চ শিক্ষিত গোষ্ঠী কোনদিনও এই দুইটি প্রশ্ন করেন না নিজেদেরঃ
১ – মাদ্রাসা না থাকলে কি এই দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা পড়তে পারবে কোথাও? পৃথিবীর বিভিন্ন স্বল্প আয়ের দেশে যেখানে মাদ্রাসা নেই সেখানে কি দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা পড়াশুনা করেন? নেপালে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? শ্রীলঙ্কায় দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? ভারতের কেরালায়, যেখানে প্রায় ১০০% মানুষ স্বাক্ষর, এই অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? ঘানা কিম্বা ইথিওপিয়া কিম্বা সুদানে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়াশুনা করে?
২ – যদি ধরেই নেয়া হয় যে, মাদ্রাসা ছাড়া আসলেই গরীব মানুষের বাচ্চাদের আর কোনও গতি নেই, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, মাদ্রাসায় পড়ে কি এই সকল দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা আদৌ তাদের নিজেদের ও পরিবারের দারিদ্র ঘোচাতে পারছেন? তাঁরা কি পারছেন তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক “বর্গ” বা “শ্রেনী” র উত্তোরন ঘটাতে?
৩.
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর নতুন পুস্তক “The country of first boys” পুস্তকের একটি লেখায় চমৎকার একটি যুক্তি তুলে ধরেছেন। যারা বইটি পড়েন নি, তাঁদের জন্যে উল্লিখিত প্রবন্ধটির একটি সারাংশ তুলে ধরছি প্রথমে। উল্লেখিত প্রবন্ধটির শিরোনামেই তিনি পুস্তকটির নামকরণ করেছেন। তারপরে অমর্ত্য সেনের যুক্তি দিয়ে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেস্টা করবো।
এই প্রবন্ধটিতে অমর্ত্য সেন ভারতের “ফার্স্ট বয়” সংস্কৃতির বেশ ভদ্রস্থ ভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, বহু বছর ধরে ভারতে এই “ফার্স্ট বয়” সংস্কৃতি চালু হয়ে আসছে। তিনি তাঁর নিজের শৈশবেও দেখেছেন এই সংস্কৃতি। বহু সফল মানুষ তাঁদের প্রৌঢ় বয়সের সময়েও ভুলতে পারেন না যে তাঁরা এক সময় “ফার্স্টবয়” ছিলেন। এমন কি বহু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সারা জীবন ধরে সেই স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়ান। কেউ কেউ, স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় গণিতে বা পদার্থবিজ্ঞানে কত নাম্বার পেয়েছিলেন সেটাও মুখস্থ রাখেন সারা জীবন ধরে আর বিভিন্ন পার্টী বা সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে খোশগল্পে সেসব বলে বেড়ান। এরপর ডঃ সেন, ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সাধারণ আলোচনা করেছেন, কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে আলোচনা করেছেন ভারতের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা। এবং ভারতের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সকল প্রশ্নের একটি প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে এই রকমঃ
ভারতের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ শিশু হাইস্কুল পর্যন্ত আসতে পারেনা। অর্থাৎ সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এমন যে সেখানে যারা সারা ভারতে “ফার্স্টবয়” হচ্ছেন, তাঁরা আসলে এক ধরনের শিথিল প্রতিযোগিতায় “ফার্স্টবয়” হচ্ছেন। যেখানে প্রতিযোগিতায় শতকরা ৫০ ভাগ প্রতিযোগী আসতেই পারছেন না। পুরোটা ফাকা মাঠে গোল দেয়া না হলেও, অন্তত অর্ধেক ফাকা মাঠে গোল দিচ্ছেন এই সকল কথিত “ফার্স্টবয়”রা। এটা কি একটা “ফেয়ার গেম” বলা যাবে? যাবেনা। ধরুন ভারতের এই বঞ্চিত শতকরা ৫০ ভাগ শিশুকে যদি কোনোভাবে হাইস্কুল ফাইনাল পর্যন্ত ধরে রাখা যায়, তাহলে কি বিষয়টা আমাদের বর্তমান “ফার্স্টবয়”দের জন্যে খানিকটা হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তাঁদের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখার ক্ষেত্রে?
দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরেকধাপ এগিয়ে, ভারতের এই সকল “ফার্স্টবয়” গন, পড়াশুনা করেন হয় ইংরাজি মিডিয়ামে, অথবা প্রাইভেট স্কুলে নিদেন পক্ষে পাবলিক স্কুলে পড়লেও বাড়ীতে বা শিক্ষকের বাসায় টিউশন মিলিয়ে এদের পেছনে বাবা-মার মাসের বেতনের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে থাকে। এবার দ্বিতীয় অবস্থাটির কথা ভেবে দেখুন তোঃ
ভারতের যে শতকরা ৫০ ভাগ বঞ্চিত শিশু, তাঁরা শুধু হাইস্কুলে আসাই নয়, যদি তারাও এই সকল “ফার্স্টবয়”দের মতো একই রকমের সুবিধাদি পেতো, তাহলে এই সকল “ফার্স্টবয়”দের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখাটা কতটা সহজ বা কঠিন হতো?
এই দুটি প্রশ্নের পরে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, এই সংক্রান্ত রাজনীতিটির আলোচনা করেছেন। ভারতের যে মূলধারার রাজনীতি এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর যে রাজনীতি, তাতে করে উল্লেখিত বঞ্চিত শতকরা ৫০ শিশু কখনই মূলধারার প্রতিযোগিতায় এসে ভিড়তে পারবেনা। সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাকেই সেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, গড়ে তোলা হয়েছে, এবং এই ব্যবস্থাকেই মহিমান্বিত করা হচ্ছে প্রতিদিন, যাতে এই সকল মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের সন্তানদের সারাজীবনের “ফার্স্টবয়” ইমেজ টী প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখিন না হয়। যেনো আরো বহু বহু বছর ধরে এদের সন্তানদের “ফার্স্টবয়” হওয়া টা ঝামেলা মুক্ত, নির্ঝঞ্ঝাট হয়।
এবার আসুন, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এর এই এনালজি টা যুক্তি কাঠামোটি বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রোয়োগ করে দেখা যাক।
দৃশ্যপট – ১
ধরুন বাংলাদেশের ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা বাংলাদেশের জিলা স্কুল গুলোতে চলে আসলো। সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো। অবস্থা টা কি দাঁড়াবে বলুন তো? জিলা স্কুলের “ফার্স্টবয়”দের কি পরিশ্রম আরেকটু বেশী করতে হবে, তাঁদের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখার জন্যে?
দৃশ্যপট – ২
ধরুন বাংলাদেশের এই ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্র যদি দেশের বিভিন্ন জিলা স্কুলে অর্থাৎ মূলধারার স্কুল গুলোতে চলে আসে, সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো। শুধু তাইই নয়, বরং এদেরও বাড়ীতে প্রাইভেট শিক্ষক পাওয়া গেলো, কিম্বা টিচারের বাড়ীতে ব্যাচে পড়ার সুযোগ পেলো এই শিশুরা, তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়াবে বলুনতো? আমাদের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখার পারফরম্যান্স কি চাপের মুখে পড়ে যাবে? আমাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত – উচ্চবিত্ত পরিবারের যে সকল ছেলে মেয়েরা এখন ফার্স্টবয় বা ফার্স্ট গার্ল হচ্ছেন, তাদের নিজ নিজ আসন টি কি একটু অনিশ্চিত হয়ে পড়বে?
আমি আরেকটু এগিয়ে যেতে চাই –
দৃশ্যপট – ৩
ধরুন বাংলাদেশের এই ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্র যদি দেশের বিভিন্ন ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে অর্থাৎ মূলধারার দেশী বিদেশী ইংরাজি মিডিয়াম স্কুল গুলোতে চলে আসে, সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো, ও লেভেল এবং এ লেভেল পড়তে লাগলো। বলুন তো ধনীর দুলাল দের কি অবস্থা হবে? এই ধনীর দুলালেরা যারা বাবার গাড়ী করে স্কুলে যান, টিফিনে কে এফ সি বা পিজ্জা হাটে বেড়াতে যান, তাদের পক্ষে তাদের গ্রেড ধরে রাখা কি আরেকটু কস্টকর হয়ে উঠবে?
কিন্তু বাস্তবে এই তিনটি দৃশ্যপটের কোনটিই হবে না। কেননা, আমাদের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তি, শিক্ষিত বাঙ্গালী মনে করেন, মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গাতেই রাখতে হবে। এর কোনও সামাজিক উল্লম্ফন ঘটানো যাবেনা। গরিবের বাচ্চা মাদ্রাসায় পড়বে আর “আমাদের বাচ্চা” জিলা স্কুলে পড়বে কিম্বা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়বে। এর নাম হচ্ছে “মাদ্রাসা প্রেম” । উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীর “মাদ্রাসা-প্রেম”।
ভেবে বলুন তো এটা কি আসলে মাদ্রাসা প্রেম? নাকি পরের সন্তান চুলোয় যাক, “আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে”র নাগরিক স্বার্থপরতা?
মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গায় রেখে দিলে কি মাদ্রাসার ছাত্রদের সামাজিক গতিশীলতা বা “সোশ্যাল মোবিলিটি”র পথ খুলে যায়? নাকি চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়? রিকশা চালকের ছেলে রিকশা চালাবে, কাঠ মিস্তিরির ছেলে আমার ফারনিচার বানাবে, ডাক্তারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে আর ইঞ্জিনিয়ার এর ছেলে ডাক্তার হবে, চিরকাল ধরে এই ব্যবস্থা চলতে থাকে, সেটা কি খুব কাম্য? হ্যা সমাজের অভিজাত শ্রেনীর কাছে সেটাই সবচাইতে কাম্য দৃশ্যপট, সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই ধর্ম, সেটাই শাশ্বত ! এর ব্যতিক্রম যারা বলে, তাঁরা বেয়াদব, নাস্তিক, অশিক্ষিত, বোকা। রিকশা চালকের ছেলে বড় জোর মসজিদের তৃতীয় মুয়াজ্জিন হবে, সেতো আর আমার ছেলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেনা, তাই না? রিকশা চালকের ছেলেটি যেনো চিরকাল মাদ্রাসায় যেতে পারে, তাই “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গায়” রাখা দরকার। মাদ্রাসার ছেলে যেনো কখনও একাউন্টিং না পড়ে, তাহলে তো স্ট্যান্ডারড চার্টার্ড ব্যাঙ্কে আমার ছেলের চাকুরীটা ঝামেলায় পড়ে যাবে, তাই না? মাদ্রাসার ছেলে যেনো কখনও ফারমেসি না পড়ে, তাহলে তো নোভারটিস এ আমার মেয়ের চাকুরী টা ঝামেলায় পড়ে যাবে, তাই নয় কি? সুতরাং মাদ্রাসা কে মাদ্রাসায় রাখতে হবে। এর বিরোধিতা যারা করবে, তাদের কে “সেকুলার” বলে ব্যাঙ্গ করা হবে, তাদেরকে নাস্তিক বলে ছি ছি করা হবে, তাদের কে নিরবোধ বলে হেসে উড়িয়ে দেয়া হবে।
সামাজিক গতিশীলতা বা “সোশ্যাল মোবিলিটি”র ধারনা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা
“সোশ্যাল মোবিলিটি”র ধারনাটি খুব সহজ। ধরুন – ডাক্তার এর ছেলে ডাক্তার – ইনজিনিয়ার বা উকিল হবে আর রিকশা চালকের ছেলে হবে রিকশা চালক বা কাঠ মিস্ত্রি বা বড়জোড় টেম্পো চালক। যদি এমনটাই ঘটে কোনও সমাজে, তাহলে এটা একটি বদ্ধ সমাজের উদাহরণ, যেখানে সোশ্যাল মোবিলিটি প্রায় শুন্যের কোঠায়। সোশ্যাল মোবিলিটির ধারনাটি একটি পজেটিভ ধারনা। স্বাভাবিক ভাবেই, আমাদের দেশে এটি একটি বিরল ঘটনা, সেই জন্যেই, মাদ্রাসার একটি ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী বিভাগে সুযোগ পেলে তা জাতিয় পত্রিকায় খবর হয়ে ওঠে, কারণ এটি একটি বিরল ঘটনা।
সোশ্যাল মোবিলিটির সমস্যাটি শুধু আমাদের নয়, ভারত, পাকিস্থান, চীন এমন কি আমেরিকা সহ পৃথিবীর বহু দেশে বিদ্যমান। একটা বেশ জনপ্রিয় বিবৃতিও চালু আছে পসচিমা দেশে – আমেরিকায় কোনও একটি তরুন যদি এক প্রজন্মে তাঁর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন চায়, তাহলে তাঁর ফিনল্যান্ডে ইমিগ্রেশন নেয়া উচিত। অর্থাৎ একজন দরিদ্র আমেরিকান যুবক তাঁর সপ্ন বাস্তবায়ন করাটা আমেরিকায় যতটা কঠিন ফিনল্যান্ডে ততটা কঠিন নয়।
বলুন তো, মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি বংশ পরম্পরায় মাদ্রাসাতেই থেকে যায়, তাহলে সেটা সেই সকল পরিবারগুলোর জন্যেও কি খুব সুবিধাজনক কিছু?
শেষ প্রশ্ন !
সুতরাং যে সকল এলিট মানুষেরা বলেন, “মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গাতেই রাখতে হবে”, তাঁরা কি আসলে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের কিম্বা তাঁদের পরিবারের বন্ধু? নাকি এরা আসলে নিজেদের সন্তানদের পেশার যায়গাটিকে ঝুকিমুক্ত রাখার জন্যে এই রাজনৈতিক সংগ্রামটি চালিয়ে যাচ্ছেন “মাদ্রাসা প্রেমিক” হিসাবে? এরা বলছেন “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গায় থাকতে দিন”, এই কথাটি কি তাঁরা আসলে মাদ্রাসার বাচ্চাদের প্রতি প্রেম থেকে বলছেন, নাকি নিজেদের সন্তানদের চাকুরীর বাজার নিষ্কণ্টক রাখার জন্যে বলছেন? প্রশ্নটি খতিয়ে দেখুন। দেখুন, এই সকল মাদ্রাসা প্রেমিকের কতজনের বাচ্চা কাচ্চারা মাদ্রাসায় পড়ে, তাহলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। হিসাব করে দেখলে দেখবেন, শতকরা ৯৯.৯৯% মাদ্রাসা প্রেমিকের বাচ্চারা পড়েন, মুল্ধারার স্কুলে, অভিজাত স্কুলে কিম্বা শহরের সবচাইতে দামী ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে। সুতরাং এদের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সোস্যাল মোবিলিটির চাকাটিকে সব সময় নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে রাখা।
আমাদের দেশের ভদ্রলোক নাগরিকদের একটি অংশ মনে করেন “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার স্থানে থাকতে দেয়া উচিত”। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষা কে নিয়ে কোনও রকমের সংস্কার বা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন বিষয়ে কিছু বলা যাবেনা। এরা বলেন মাদ্রাসায় এদেশের দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা পড়ে, সুতরাং মাদ্রাসা থাকতে হবে। মাদ্রাসা না থাকলে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়বে? দরিদ্র মানুষের সন্তানদের শিক্ষার এই ধারনাটি খুব জনপ্রিয়, কিন্তু বাঙ্গালী উচ্চ শিক্ষিত গোষ্ঠী কোনদিনও এই দুইটি প্রশ্ন করেন না নিজেদেরঃ
১ – মাদ্রাসা না থাকলে কি এই দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা পড়তে পারবে কোথাও? পৃথিবীর বিভিন্ন স্বল্প আয়ের দেশে যেখানে মাদ্রাসা নেই সেখানে কি দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা পড়াশুনা করেন? নেপালে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? শ্রীলঙ্কায় দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? ভারতের কেরালায়, যেখানে প্রায় ১০০% মানুষ স্বাক্ষর, এই অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়েন? ঘানা কিম্বা ইথিওপিয়া কিম্বা সুদানে দরিদ্র মানুষের বাচ্চারা কোথায় পড়াশুনা করে?
২ – যদি ধরেই নেয়া হয় যে, মাদ্রাসা ছাড়া আসলেই গরীব মানুষের বাচ্চাদের আর কোনও গতি নেই, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, মাদ্রাসায় পড়ে কি এই সকল দরিদ্র মানুষের সন্তানেরা আদৌ তাদের নিজেদের ও পরিবারের দারিদ্র ঘোচাতে পারছেন? তাঁরা কি পারছেন তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক “বর্গ” বা “শ্রেনী” র উত্তোরন ঘটাতে?
৩.
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর নতুন পুস্তক “The country of first boys” পুস্তকের একটি লেখায় চমৎকার একটি যুক্তি তুলে ধরেছেন। যারা বইটি পড়েন নি, তাঁদের জন্যে উল্লিখিত প্রবন্ধটির একটি সারাংশ তুলে ধরছি প্রথমে। উল্লেখিত প্রবন্ধটির শিরোনামেই তিনি পুস্তকটির নামকরণ করেছেন। তারপরে অমর্ত্য সেনের যুক্তি দিয়ে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেস্টা করবো।
এই প্রবন্ধটিতে অমর্ত্য সেন ভারতের “ফার্স্ট বয়” সংস্কৃতির বেশ ভদ্রস্থ ভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, বহু বছর ধরে ভারতে এই “ফার্স্ট বয়” সংস্কৃতি চালু হয়ে আসছে। তিনি তাঁর নিজের শৈশবেও দেখেছেন এই সংস্কৃতি। বহু সফল মানুষ তাঁদের প্রৌঢ় বয়সের সময়েও ভুলতে পারেন না যে তাঁরা এক সময় “ফার্স্টবয়” ছিলেন। এমন কি বহু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সারা জীবন ধরে সেই স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়ান। কেউ কেউ, স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় গণিতে বা পদার্থবিজ্ঞানে কত নাম্বার পেয়েছিলেন সেটাও মুখস্থ রাখেন সারা জীবন ধরে আর বিভিন্ন পার্টী বা সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে খোশগল্পে সেসব বলে বেড়ান। এরপর ডঃ সেন, ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সাধারণ আলোচনা করেছেন, কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে আলোচনা করেছেন ভারতের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা। এবং ভারতের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সকল প্রশ্নের একটি প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে এই রকমঃ
ভারতের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ শিশু হাইস্কুল পর্যন্ত আসতে পারেনা। অর্থাৎ সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এমন যে সেখানে যারা সারা ভারতে “ফার্স্টবয়” হচ্ছেন, তাঁরা আসলে এক ধরনের শিথিল প্রতিযোগিতায় “ফার্স্টবয়” হচ্ছেন। যেখানে প্রতিযোগিতায় শতকরা ৫০ ভাগ প্রতিযোগী আসতেই পারছেন না। পুরোটা ফাকা মাঠে গোল দেয়া না হলেও, অন্তত অর্ধেক ফাকা মাঠে গোল দিচ্ছেন এই সকল কথিত “ফার্স্টবয়”রা। এটা কি একটা “ফেয়ার গেম” বলা যাবে? যাবেনা। ধরুন ভারতের এই বঞ্চিত শতকরা ৫০ ভাগ শিশুকে যদি কোনোভাবে হাইস্কুল ফাইনাল পর্যন্ত ধরে রাখা যায়, তাহলে কি বিষয়টা আমাদের বর্তমান “ফার্স্টবয়”দের জন্যে খানিকটা হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তাঁদের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখার ক্ষেত্রে?
দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরেকধাপ এগিয়ে, ভারতের এই সকল “ফার্স্টবয়” গন, পড়াশুনা করেন হয় ইংরাজি মিডিয়ামে, অথবা প্রাইভেট স্কুলে নিদেন পক্ষে পাবলিক স্কুলে পড়লেও বাড়ীতে বা শিক্ষকের বাসায় টিউশন মিলিয়ে এদের পেছনে বাবা-মার মাসের বেতনের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে থাকে। এবার দ্বিতীয় অবস্থাটির কথা ভেবে দেখুন তোঃ
ভারতের যে শতকরা ৫০ ভাগ বঞ্চিত শিশু, তাঁরা শুধু হাইস্কুলে আসাই নয়, যদি তারাও এই সকল “ফার্স্টবয়”দের মতো একই রকমের সুবিধাদি পেতো, তাহলে এই সকল “ফার্স্টবয়”দের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখাটা কতটা সহজ বা কঠিন হতো?
এই দুটি প্রশ্নের পরে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, এই সংক্রান্ত রাজনীতিটির আলোচনা করেছেন। ভারতের যে মূলধারার রাজনীতি এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর যে রাজনীতি, তাতে করে উল্লেখিত বঞ্চিত শতকরা ৫০ শিশু কখনই মূলধারার প্রতিযোগিতায় এসে ভিড়তে পারবেনা। সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাকেই সেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, গড়ে তোলা হয়েছে, এবং এই ব্যবস্থাকেই মহিমান্বিত করা হচ্ছে প্রতিদিন, যাতে এই সকল মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের সন্তানদের সারাজীবনের “ফার্স্টবয়” ইমেজ টী প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখিন না হয়। যেনো আরো বহু বহু বছর ধরে এদের সন্তানদের “ফার্স্টবয়” হওয়া টা ঝামেলা মুক্ত, নির্ঝঞ্ঝাট হয়।
এবার আসুন, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এর এই এনালজি টা যুক্তি কাঠামোটি বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রোয়োগ করে দেখা যাক।
দৃশ্যপট – ১
ধরুন বাংলাদেশের ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা বাংলাদেশের জিলা স্কুল গুলোতে চলে আসলো। সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো। অবস্থা টা কি দাঁড়াবে বলুন তো? জিলা স্কুলের “ফার্স্টবয়”দের কি পরিশ্রম আরেকটু বেশী করতে হবে, তাঁদের “ফার্স্টবয়ত্ত্ব” ধরে রাখার জন্যে?
দৃশ্যপট – ২
ধরুন বাংলাদেশের এই ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্র যদি দেশের বিভিন্ন জিলা স্কুলে অর্থাৎ মূলধারার স্কুল গুলোতে চলে আসে, সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো। শুধু তাইই নয়, বরং এদেরও বাড়ীতে প্রাইভেট শিক্ষক পাওয়া গেলো, কিম্বা টিচারের বাড়ীতে ব্যাচে পড়ার সুযোগ পেলো এই শিশুরা, তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়াবে বলুনতো? আমাদের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখার পারফরম্যান্স কি চাপের মুখে পড়ে যাবে? আমাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত – উচ্চবিত্ত পরিবারের যে সকল ছেলে মেয়েরা এখন ফার্স্টবয় বা ফার্স্ট গার্ল হচ্ছেন, তাদের নিজ নিজ আসন টি কি একটু অনিশ্চিত হয়ে পড়বে?
আমি আরেকটু এগিয়ে যেতে চাই –
দৃশ্যপট – ৩
ধরুন বাংলাদেশের এই ষাট লক্ষ কওমি মাদ্রাসার ছাত্র যদি দেশের বিভিন্ন ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে অর্থাৎ মূলধারার দেশী বিদেশী ইংরাজি মিডিয়াম স্কুল গুলোতে চলে আসে, সেখানে আরো অনেক ছাত্রের সাথে গণিত, ইংরাজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি, সমাজবিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি পড়তে শুরু করলো, ও লেভেল এবং এ লেভেল পড়তে লাগলো। বলুন তো ধনীর দুলাল দের কি অবস্থা হবে? এই ধনীর দুলালেরা যারা বাবার গাড়ী করে স্কুলে যান, টিফিনে কে এফ সি বা পিজ্জা হাটে বেড়াতে যান, তাদের পক্ষে তাদের গ্রেড ধরে রাখা কি আরেকটু কস্টকর হয়ে উঠবে?
কিন্তু বাস্তবে এই তিনটি দৃশ্যপটের কোনটিই হবে না। কেননা, আমাদের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তি, শিক্ষিত বাঙ্গালী মনে করেন, মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গাতেই রাখতে হবে। এর কোনও সামাজিক উল্লম্ফন ঘটানো যাবেনা। গরিবের বাচ্চা মাদ্রাসায় পড়বে আর “আমাদের বাচ্চা” জিলা স্কুলে পড়বে কিম্বা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়বে। এর নাম হচ্ছে “মাদ্রাসা প্রেম” । উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালীর “মাদ্রাসা-প্রেম”।
ভেবে বলুন তো এটা কি আসলে মাদ্রাসা প্রেম? নাকি পরের সন্তান চুলোয় যাক, “আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে”র নাগরিক স্বার্থপরতা?
মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গায় রেখে দিলে কি মাদ্রাসার ছাত্রদের সামাজিক গতিশীলতা বা “সোশ্যাল মোবিলিটি”র পথ খুলে যায়? নাকি চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়? রিকশা চালকের ছেলে রিকশা চালাবে, কাঠ মিস্তিরির ছেলে আমার ফারনিচার বানাবে, ডাক্তারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে আর ইঞ্জিনিয়ার এর ছেলে ডাক্তার হবে, চিরকাল ধরে এই ব্যবস্থা চলতে থাকে, সেটা কি খুব কাম্য? হ্যা সমাজের অভিজাত শ্রেনীর কাছে সেটাই সবচাইতে কাম্য দৃশ্যপট, সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই ধর্ম, সেটাই শাশ্বত ! এর ব্যতিক্রম যারা বলে, তাঁরা বেয়াদব, নাস্তিক, অশিক্ষিত, বোকা। রিকশা চালকের ছেলে বড় জোর মসজিদের তৃতীয় মুয়াজ্জিন হবে, সেতো আর আমার ছেলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেনা, তাই না? রিকশা চালকের ছেলেটি যেনো চিরকাল মাদ্রাসায় যেতে পারে, তাই “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গায়” রাখা দরকার। মাদ্রাসার ছেলে যেনো কখনও একাউন্টিং না পড়ে, তাহলে তো স্ট্যান্ডারড চার্টার্ড ব্যাঙ্কে আমার ছেলের চাকুরীটা ঝামেলায় পড়ে যাবে, তাই না? মাদ্রাসার ছেলে যেনো কখনও ফারমেসি না পড়ে, তাহলে তো নোভারটিস এ আমার মেয়ের চাকুরী টা ঝামেলায় পড়ে যাবে, তাই নয় কি? সুতরাং মাদ্রাসা কে মাদ্রাসায় রাখতে হবে। এর বিরোধিতা যারা করবে, তাদের কে “সেকুলার” বলে ব্যাঙ্গ করা হবে, তাদেরকে নাস্তিক বলে ছি ছি করা হবে, তাদের কে নিরবোধ বলে হেসে উড়িয়ে দেয়া হবে।
সামাজিক গতিশীলতা বা “সোশ্যাল মোবিলিটি”র ধারনা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা
“সোশ্যাল মোবিলিটি”র ধারনাটি খুব সহজ। ধরুন – ডাক্তার এর ছেলে ডাক্তার – ইনজিনিয়ার বা উকিল হবে আর রিকশা চালকের ছেলে হবে রিকশা চালক বা কাঠ মিস্ত্রি বা বড়জোড় টেম্পো চালক। যদি এমনটাই ঘটে কোনও সমাজে, তাহলে এটা একটি বদ্ধ সমাজের উদাহরণ, যেখানে সোশ্যাল মোবিলিটি প্রায় শুন্যের কোঠায়। সোশ্যাল মোবিলিটির ধারনাটি একটি পজেটিভ ধারনা। স্বাভাবিক ভাবেই, আমাদের দেশে এটি একটি বিরল ঘটনা, সেই জন্যেই, মাদ্রাসার একটি ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী বিভাগে সুযোগ পেলে তা জাতিয় পত্রিকায় খবর হয়ে ওঠে, কারণ এটি একটি বিরল ঘটনা।
সোশ্যাল মোবিলিটির সমস্যাটি শুধু আমাদের নয়, ভারত, পাকিস্থান, চীন এমন কি আমেরিকা সহ পৃথিবীর বহু দেশে বিদ্যমান। একটা বেশ জনপ্রিয় বিবৃতিও চালু আছে পসচিমা দেশে – আমেরিকায় কোনও একটি তরুন যদি এক প্রজন্মে তাঁর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন চায়, তাহলে তাঁর ফিনল্যান্ডে ইমিগ্রেশন নেয়া উচিত। অর্থাৎ একজন দরিদ্র আমেরিকান যুবক তাঁর সপ্ন বাস্তবায়ন করাটা আমেরিকায় যতটা কঠিন ফিনল্যান্ডে ততটা কঠিন নয়।
বলুন তো, মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি বংশ পরম্পরায় মাদ্রাসাতেই থেকে যায়, তাহলে সেটা সেই সকল পরিবারগুলোর জন্যেও কি খুব সুবিধাজনক কিছু?
শেষ প্রশ্ন !
সুতরাং যে সকল এলিট মানুষেরা বলেন, “মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গাতেই রাখতে হবে”, তাঁরা কি আসলে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের কিম্বা তাঁদের পরিবারের বন্ধু? নাকি এরা আসলে নিজেদের সন্তানদের পেশার যায়গাটিকে ঝুকিমুক্ত রাখার জন্যে এই রাজনৈতিক সংগ্রামটি চালিয়ে যাচ্ছেন “মাদ্রাসা প্রেমিক” হিসাবে? এরা বলছেন “মাদ্রাসা কে মাদ্রাসার যায়গায় থাকতে দিন”, এই কথাটি কি তাঁরা আসলে মাদ্রাসার বাচ্চাদের প্রতি প্রেম থেকে বলছেন, নাকি নিজেদের সন্তানদের চাকুরীর বাজার নিষ্কণ্টক রাখার জন্যে বলছেন? প্রশ্নটি খতিয়ে দেখুন। দেখুন, এই সকল মাদ্রাসা প্রেমিকের কতজনের বাচ্চা কাচ্চারা মাদ্রাসায় পড়ে, তাহলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। হিসাব করে দেখলে দেখবেন, শতকরা ৯৯.৯৯% মাদ্রাসা প্রেমিকের বাচ্চারা পড়েন, মুল্ধারার স্কুলে, অভিজাত স্কুলে কিম্বা শহরের সবচাইতে দামী ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে। সুতরাং এদের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সোস্যাল মোবিলিটির চাকাটিকে সব সময় নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে রাখা।
(বাংলাদেশের একটি ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রদের একটি ছবি, উপরের ছবিটির সাথে, এই ছবিটির কি কোনও পার্থক্য আছে? )
এই সকল ভন্ড “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের চিনে নেয়াটা জরূরী।
আমি বিভোর হয়ে স্বপ্ন দেখি, আজ যে বাচ্চা ছেলেটি বা মেয়েটি মাদ্রাসায় যাচ্ছে, তাঁরা যেনো কখনও মূলধারায় পড়াশুনার সুযোগ লাভ করে, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ফার্মেসী, একাউন্টিং এই সকল এপ্লাইড বিশয়ে পড়ার সুযোগ পায়, আর সেই সকল প্রতারক “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের সন্তানদের ঘাড়ে টোকা দিয়ে বলে – “সরে যা, আমি এসেছি” …… !
বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসার ছাত্র – ছাত্রী বাচ্চারা মাদ্রাসার কবল থেকে মুক্তি পাক ! আর যে সকল ভন্ড প্রতারকেরা নিজেদের সন্তানদের ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে পাঠিয়ে “মাদ্রাসা প্রেমিক” সাজেন, তাঁদের পোশাকটি খুলে ফেলে চিনে নিক এই সকল প্রতারকদের। চিনে নিক সেই সকল প্রতারকদের, যারা “মাদ্রাসা প্রেমিক” সেজে আসলে মাদ্রাসার বাচ্চাদের বংশ পরম্পরায় মাদ্রাসায় বন্দী করে রাখতে চায়।
আমি জানি, সেদিন খুব দূরে নয়।
এই সকল ভন্ড “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের চিনে নেয়াটা জরূরী।
আমি বিভোর হয়ে স্বপ্ন দেখি, আজ যে বাচ্চা ছেলেটি বা মেয়েটি মাদ্রাসায় যাচ্ছে, তাঁরা যেনো কখনও মূলধারায় পড়াশুনার সুযোগ লাভ করে, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ফার্মেসী, একাউন্টিং এই সকল এপ্লাইড বিশয়ে পড়ার সুযোগ পায়, আর সেই সকল প্রতারক “মাদ্রাসা প্রেমিক” দের সন্তানদের ঘাড়ে টোকা দিয়ে বলে – “সরে যা, আমি এসেছি” …… !
বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসার ছাত্র – ছাত্রী বাচ্চারা মাদ্রাসার কবল থেকে মুক্তি পাক ! আর যে সকল ভন্ড প্রতারকেরা নিজেদের সন্তানদের ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে পাঠিয়ে “মাদ্রাসা প্রেমিক” সাজেন, তাঁদের পোশাকটি খুলে ফেলে চিনে নিক এই সকল প্রতারকদের। চিনে নিক সেই সকল প্রতারকদের, যারা “মাদ্রাসা প্রেমিক” সেজে আসলে মাদ্রাসার বাচ্চাদের বংশ পরম্পরায় মাদ্রাসায় বন্দী করে রাখতে চায়।
আমি জানি, সেদিন খুব দূরে নয়।
সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬
মৌলবাদের চাপাতিতে অনন্ত বিজয় দাশকে হারাবার এক বছর
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:-আজ ৩০শে মে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোটকাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদক, বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ (অক্টোবর ৬, ১৯৮২-মে, ১২, ২০১৫) এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। একটি শোষণ-নিপীড়ণহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠণের জন্য মুক্তচিন্তা, ইহজাগতিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও কুসংস্কারবিরোধিতা যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা অতি আবশ্যক তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন গুটিকয়েক মানুষ। […]
আত্মহত্যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :-এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় অস্বাভাবিক পাশের হার। আমাদের সময় পাশের হার ৩০~৪০% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। এই পাশের হার নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। গত কয়েকবছর থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। শিক্ষার্থিরা পড়াশুনা করছে এটা যেমন সত্য তেমনি সরকারের কিছু অলিখিত নীতি মালার বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারনে পাশের হার বাড়ছে […]
এক সুধাংশু পালিয়ে বাঁচলো
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:-[এইমাত্র খবর পেলাম আমার এক প্রিয়জন প্রাণটা হাতে নিয়ে পালিয়ে যেতে সফল হয়েছে। আমার বুকের উপর থেকে মস্ত একটা পাথর নেমে গেল। এই কথাটি লিখতে গিয়েই সাকিব আহমদ মুছা “সুধাংশু তুই পালা” লেখাটির কথা মনে পড়ছে। কবি শামসুর রাহমানের “সুধাংশু যাবেনা” কবিতাটি থেকেই সম্ভবত “সুধাংশু” নামটা সাকিব আহমদ মুছা বেছে নিয়েছিলেন। দুজনকেই শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘটনাটি শুরু করছি […]
পরিচয় দেয়া হল , মুসলিম নেতা হিসাবে
বাদ-প্রতিবাদ
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:-শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত মহোদয়কে লাঞ্চনাকারী প্রভাবশালী , ক্ষমতার
শীর্ষে আরোহী, আইন প্রণেতা একজন মুসলমান ( তিনি নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য
ব্যবহার করেছেন ধর্মকে ,তাই উনার পরিচয় দেয়া হল , মুসলিম নেতা হিসাবে) ,
যেভাবে ও ভঙ্গীতে মান্যবর একজন হিন্দু ( যেহেতু উনার ধর্মীয় পরিচয় কাজে
লাগানো হয়েছে ) শিক্ষককে […]
মুক্তমনা ব্লগ ও আমার নাস্তিকতার হাতেখড়ি- সাকিব আহমদ মুছা
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :-“অভিজিৎ রায়’’ ও “মুক্তমানা ব্লগ’’ নামগুলোর সাথে পরিচয় ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে যখন বাংলা ব্লগে পদচারণা শুরু করি। আমি যে ব্লগের সদস্য ছিলাম সেই ব্লগে যখন ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে তর্ক বিতর্ক হত তখন সেখানে “অভিজিৎ রায়’’ ও মুক্তমন ব্লগের নাম আপনা আপনি চলে আসত।তখন শুধু জানতাম অভিজিৎ রায় একজন নাস্তিক আর মুক্তমনা নাস্তিকদের ব্লগ!নিজে ধর্মীয় বইগুলো না পড়ে শুধু শুনে শুনে ধার্মিক ছিলাম বলে ধর্ম বিষয়ে মাথা ঘামাতাম না ফলে সে সময় মুক্তমনাতে ঢোকা হয় নি। প্রতিদিনই দেখতাম বোমা হামলায় মানুষ মরে, একে অপরের মন্দির মসজিদ ভাঙ্গে তখন মনে মনে ভাবতাম এরা আসলে ধর্ম সম্পর্কে জানেনা বলেই এমন করছে! সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি প্রতিটি ধর্ম শান্তির কথা বলে, ন্যায়ের কথা বলে, ধর্মগুলোতে শুধু শান্তি আর শান্তি! যারা খুন, ধর্ষণ, লুন্ঠন করছে তারা না বুঝে এসব কাজ করছে এতে ধর্মের কোন দোষ নেই! এভাবে ভাবতে ভাবতে আর সব ধার্মিকদের মত আমি ব্লগে ফুল, পাখি, প্রকৃতি, কবিতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম ফলে ধর্ম নিয়ে ভাবার সময় মোটেও ছিল না। জানতাম আমার ধর্ম সঠিক ধর্ম।
আমার মুক্তচিন্তার যাত্রাটা শুরু হয় মূলত রাজিব হায়দারের মৃত্যুর পর থেকেই। তখন শাহবাগ শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল, গণজাগরণ মঞ্চ লোকে লোকারণ্য।এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ রাতে জঙ্গিদের হাতে খুন হয়ে যান রাজিব হায়দার। রাজিব হায়দারের মুত্যুর খবর শুনার পরই প্রথম মনে প্রশ্ন জাগে ধর্ম যদি শান্তির কথা বলে তবে মানুষ ধর্মের নামে খুন করে কেন? জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলামে খুন খারাপির কোন স্থান নেই। টিভি, মসজিদের মাইক, ওয়াজ মাহফিল, পত্রিকা, ইন্টারনেট মিলিয়ে কত হাজার বার যে শুনে আসছি ‘ ইসলাম শান্তির ধর্ম’ তা লিখে রাখলে বোধহয় এই তিন শব্দ দিয়ে একটি বড় আকারের বই ছাপানো যেত! যাইহোক, মনের কৌতুহল মিটানোর জন্য রাজিব হায়দারের মৃত্যুর পরদিন থেকে শুরু করলাম মুক্তমনায় অনুসন্ধান।জানার মূল আগ্রহ ছিল কেন নাস্তিকরা ধর্মের সমালোচনা করে? কেন ধার্মিকরা ধর্মের নামে খুন করে?
শুরু করলাম মুক্তমনা ব্লগ থেকে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করা। প্রথমেই অভিজিৎ দার লেখাগুলো ডাউনলোড করা শুরু করলাম কারণ তখন শুধু্ ঐ একটি নামের সাথে পরিচিত ছিলাম! মনোযোগ দিয়ে শুরু করলাম নাস্তিকের লেখা পড়া। কে জানত তখন এই লেখাগুলো আমার চিন্তাধারা পুরোপুরি পাল্টে দিবে। তখন থেকেই একে একে পড়লাম অভিজিৎ দার লেখা ‘ব্যাড ডিজাইন’ ’বিজ্ঞানময় কিতাব’ ‘নৈতিকতা কি শুধুই বেহেস্তে যাবার পাসপোর্ট’ ‘ঈশ্বরই কি সৃষ্টির আদি বা প্রথম কারণ’ ‘মহাবিশ্ব এবং ঈশ্বর- একটি দার্শনিক আলোচনা’ ‘সমকামিতা (সমপ্রেম)কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ ’আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতার’ প্রত্যুত্তরে ইত্যাদি। আরো পড়লাম বিশ্বাসের ভাইরাস, অবিশ্বাসের দর্শন। তারপর একে একে অন্তদার ‘সনাতন ধর্মের দৃষ্টিতে নারী’ পার্থিব জগতের অপার্থিবতা বিশ্লেষণ’ ‘মহাপ্লাবনের বাস্তবত: পৌরাণিক অতিকথন বনাম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান’ ‘ভগবদগীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ ও অন্যান্য ’। মিজান রহমানের ‘আমার স্বর্গ এখানে’ ‘হতবুদ্ধি, হতবাক’। রণদীপম বসুর ‘সর্বগ্রাসী অপ-’বাদ’ বনাম একজন আরজ আলী মাতুব্বর’ অস্পৃশ্য ও ব্রাক্ষণবাদ এবং একজন বাবাসাহেব’। অপার্থিব জামানের ‘বিবর্তনের দৃষ্টিতে জীবন’ ’ বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব’ ’ বিজ্ঞান ধর্ম ও বিশ্বাস’ ‘মানব প্রকৃতি কি জন্মগত, না পরিবেশগত?’ ।এভাবে একে একে পড়লাম বিপ্লব পাল, প্রদীপ দেব , বন্যা আহমেদ, আকাশ মালিক, ফরিদ আহমেদ, নাস্তিকের ধর্মকথা সহ আরো অনেকের লেখা।
মুক্তমনায় এসে জানতে পারলাম ‘আরজ আলী মাতুব্বর’ নামে একজন দার্শনিকের কথা। তার ’সত্যের সন্ধান’ পড়ার পর আমি পুরোপুরি নিধার্মিক হয়ে গেলাম! উনার লেখা পড়ে মাথায় শুধু প্রশ্ন ঘুরত! ’সত্যের সন্ধান’ পড়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলাম আশপাশের ধার্মিকদের! কেউ দেখি আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না।ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মনে হয় শুধু আরজ আলী মাতুব্বরের ’সত্যের সন্ধান’ বইটি যে কেউ অনুসন্ধিৎসু মন দিয়ে পড়লেই নাস্তিক হতে বাধ্য। এরপর আস্তে আস্তে ইউটিউব থেকে বিবর্তনবাদ, পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হল, মানুষ কোথা থেকে এল, ধর্মগুলো কিভাবে এল, এইসব বিষয়ের উপর তৈরি ডকোমেন্টরিগুলো দেখতে লাগলাম। এভাবে আস্তে আস্তে সব ধারণা পরিস্কার হয়ে গেল ধর্মীয় কুসংস্কার ও ভন্ডামি সম্পর্কে।
আজ থেকে শ পাঁচেক বছর আগে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও যে সময় অতিক্রান্ত করেছিলেন আজ আমরা সেই সময় অতিক্রান্ত করছি।কোপার্নিকাসকে হত্যার পর থেকে, পৃথিবী কি সূর্যের চারদিকে ঘুরা বন্ধ করে দিয়েছে? ঠিক তেমনি মুক্তমনাদের হত্যা করলেই কি মিথ্যার উপর প্রতিষ্টিত গাঁজাখুরি গল্পের কাল্পনিক ধর্মগুলো সত্য হয়ে যাবে? শুধু এক বই পড়ুয়াদের বুঝা উচিৎ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীলদের হত্যা করলেই তোমাদের মিথ্যা ধর্ম সত্য হয়ে যাবে না। চার্চের যেসব পাদ্রীরা ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল তাদের আজ আর কেউ চিনে না কিন্তু ব্রুনো, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওদের শত শত বছর পরেও মানুষ জানে তেমনি যারা এদেশের মুক্তচিন্তকদের হত্যা করেছে তাদের কেউ চিনবেও না কিন্তু রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীলদের নাম শত বছর পরেও স্বমহিমায় থাকবে।
একজন অভিজিৎ রায় ও মুক্তমনা ব্লগ আমাকে মুক্তচিন্তা করতে শিখিয়েছিল। একজন গোঁড়া ধার্মিক থেকে মুক্তমনা হিসেবে তৈরি করতে মুক্তমনা ব্লগের অবদান কতটুকু তা শুধু আমি জানি।২৬ ফেব্রুয়ারী রাতে যখন টিভিতে দেখলাম অভিজিৎ দা জঙ্গিদের হামলায় মারা গেছেন মনে হচ্ছিল নিজের শরীর থেকে যেন কিছু একটা খসে পড়েছে। আফসোস করছিলাম কেন দেশে আসলেন? নিজের বিপদ জেনেও কোন মানুষ কি এভাবে একটি জঙ্গির আস্তানায় পা দেয়? এখন বুঝি ভয় দেখিয়ে মুক্তমনাদের আটকিয়ে রাখা যায় না। এক রাজিব হায়দারের মৃত্যু আমার মত হাজারও রাজিব হায়দারদের জন্ম হয়েছে। এক অভিজিৎয়ের মৃত্যু কত লক্ষ অভিজিৎয়ের জন্ম দিচ্ছে, দিবে তা সময়েই তা বলে দিবে। অভিজিৎ দার শারীরিক উপস্থিতি নেই কিন্তু তিনি এদেশের মুক্তচিন্তা আন্দোলনের অগ্রপথিক হয়ে থাকবেন সবসময় সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।
কলম চলছে, কলম চলবে। আলো আসবেই।
আমার মুক্তচিন্তার যাত্রাটা শুরু হয় মূলত রাজিব হায়দারের মৃত্যুর পর থেকেই। তখন শাহবাগ শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল, গণজাগরণ মঞ্চ লোকে লোকারণ্য।এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ রাতে জঙ্গিদের হাতে খুন হয়ে যান রাজিব হায়দার। রাজিব হায়দারের মুত্যুর খবর শুনার পরই প্রথম মনে প্রশ্ন জাগে ধর্ম যদি শান্তির কথা বলে তবে মানুষ ধর্মের নামে খুন করে কেন? জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলামে খুন খারাপির কোন স্থান নেই। টিভি, মসজিদের মাইক, ওয়াজ মাহফিল, পত্রিকা, ইন্টারনেট মিলিয়ে কত হাজার বার যে শুনে আসছি ‘ ইসলাম শান্তির ধর্ম’ তা লিখে রাখলে বোধহয় এই তিন শব্দ দিয়ে একটি বড় আকারের বই ছাপানো যেত! যাইহোক, মনের কৌতুহল মিটানোর জন্য রাজিব হায়দারের মৃত্যুর পরদিন থেকে শুরু করলাম মুক্তমনায় অনুসন্ধান।জানার মূল আগ্রহ ছিল কেন নাস্তিকরা ধর্মের সমালোচনা করে? কেন ধার্মিকরা ধর্মের নামে খুন করে?
শুরু করলাম মুক্তমনা ব্লগ থেকে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করা। প্রথমেই অভিজিৎ দার লেখাগুলো ডাউনলোড করা শুরু করলাম কারণ তখন শুধু্ ঐ একটি নামের সাথে পরিচিত ছিলাম! মনোযোগ দিয়ে শুরু করলাম নাস্তিকের লেখা পড়া। কে জানত তখন এই লেখাগুলো আমার চিন্তাধারা পুরোপুরি পাল্টে দিবে। তখন থেকেই একে একে পড়লাম অভিজিৎ দার লেখা ‘ব্যাড ডিজাইন’ ’বিজ্ঞানময় কিতাব’ ‘নৈতিকতা কি শুধুই বেহেস্তে যাবার পাসপোর্ট’ ‘ঈশ্বরই কি সৃষ্টির আদি বা প্রথম কারণ’ ‘মহাবিশ্ব এবং ঈশ্বর- একটি দার্শনিক আলোচনা’ ‘সমকামিতা (সমপ্রেম)কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ ’আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতার’ প্রত্যুত্তরে ইত্যাদি। আরো পড়লাম বিশ্বাসের ভাইরাস, অবিশ্বাসের দর্শন। তারপর একে একে অন্তদার ‘সনাতন ধর্মের দৃষ্টিতে নারী’ পার্থিব জগতের অপার্থিবতা বিশ্লেষণ’ ‘মহাপ্লাবনের বাস্তবত: পৌরাণিক অতিকথন বনাম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান’ ‘ভগবদগীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ ও অন্যান্য ’। মিজান রহমানের ‘আমার স্বর্গ এখানে’ ‘হতবুদ্ধি, হতবাক’। রণদীপম বসুর ‘সর্বগ্রাসী অপ-’বাদ’ বনাম একজন আরজ আলী মাতুব্বর’ অস্পৃশ্য ও ব্রাক্ষণবাদ এবং একজন বাবাসাহেব’। অপার্থিব জামানের ‘বিবর্তনের দৃষ্টিতে জীবন’ ’ বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব’ ’ বিজ্ঞান ধর্ম ও বিশ্বাস’ ‘মানব প্রকৃতি কি জন্মগত, না পরিবেশগত?’ ।এভাবে একে একে পড়লাম বিপ্লব পাল, প্রদীপ দেব , বন্যা আহমেদ, আকাশ মালিক, ফরিদ আহমেদ, নাস্তিকের ধর্মকথা সহ আরো অনেকের লেখা।
মুক্তমনায় এসে জানতে পারলাম ‘আরজ আলী মাতুব্বর’ নামে একজন দার্শনিকের কথা। তার ’সত্যের সন্ধান’ পড়ার পর আমি পুরোপুরি নিধার্মিক হয়ে গেলাম! উনার লেখা পড়ে মাথায় শুধু প্রশ্ন ঘুরত! ’সত্যের সন্ধান’ পড়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলাম আশপাশের ধার্মিকদের! কেউ দেখি আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না।ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মনে হয় শুধু আরজ আলী মাতুব্বরের ’সত্যের সন্ধান’ বইটি যে কেউ অনুসন্ধিৎসু মন দিয়ে পড়লেই নাস্তিক হতে বাধ্য। এরপর আস্তে আস্তে ইউটিউব থেকে বিবর্তনবাদ, পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হল, মানুষ কোথা থেকে এল, ধর্মগুলো কিভাবে এল, এইসব বিষয়ের উপর তৈরি ডকোমেন্টরিগুলো দেখতে লাগলাম। এভাবে আস্তে আস্তে সব ধারণা পরিস্কার হয়ে গেল ধর্মীয় কুসংস্কার ও ভন্ডামি সম্পর্কে।
আজ থেকে শ পাঁচেক বছর আগে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও যে সময় অতিক্রান্ত করেছিলেন আজ আমরা সেই সময় অতিক্রান্ত করছি।কোপার্নিকাসকে হত্যার পর থেকে, পৃথিবী কি সূর্যের চারদিকে ঘুরা বন্ধ করে দিয়েছে? ঠিক তেমনি মুক্তমনাদের হত্যা করলেই কি মিথ্যার উপর প্রতিষ্টিত গাঁজাখুরি গল্পের কাল্পনিক ধর্মগুলো সত্য হয়ে যাবে? শুধু এক বই পড়ুয়াদের বুঝা উচিৎ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীলদের হত্যা করলেই তোমাদের মিথ্যা ধর্ম সত্য হয়ে যাবে না। চার্চের যেসব পাদ্রীরা ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল তাদের আজ আর কেউ চিনে না কিন্তু ব্রুনো, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওদের শত শত বছর পরেও মানুষ জানে তেমনি যারা এদেশের মুক্তচিন্তকদের হত্যা করেছে তাদের কেউ চিনবেও না কিন্তু রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নিলয় নীলদের নাম শত বছর পরেও স্বমহিমায় থাকবে।
একজন অভিজিৎ রায় ও মুক্তমনা ব্লগ আমাকে মুক্তচিন্তা করতে শিখিয়েছিল। একজন গোঁড়া ধার্মিক থেকে মুক্তমনা হিসেবে তৈরি করতে মুক্তমনা ব্লগের অবদান কতটুকু তা শুধু আমি জানি।২৬ ফেব্রুয়ারী রাতে যখন টিভিতে দেখলাম অভিজিৎ দা জঙ্গিদের হামলায় মারা গেছেন মনে হচ্ছিল নিজের শরীর থেকে যেন কিছু একটা খসে পড়েছে। আফসোস করছিলাম কেন দেশে আসলেন? নিজের বিপদ জেনেও কোন মানুষ কি এভাবে একটি জঙ্গির আস্তানায় পা দেয়? এখন বুঝি ভয় দেখিয়ে মুক্তমনাদের আটকিয়ে রাখা যায় না। এক রাজিব হায়দারের মৃত্যু আমার মত হাজারও রাজিব হায়দারদের জন্ম হয়েছে। এক অভিজিৎয়ের মৃত্যু কত লক্ষ অভিজিৎয়ের জন্ম দিচ্ছে, দিবে তা সময়েই তা বলে দিবে। অভিজিৎ দার শারীরিক উপস্থিতি নেই কিন্তু তিনি এদেশের মুক্তচিন্তা আন্দোলনের অগ্রপথিক হয়ে থাকবেন সবসময় সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।
কলম চলছে, কলম চলবে। আলো আসবেই।
ইসলামি জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে নির্মমভাবে খুন অভিজিৎ রায়
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :-অনন্ত বিজয় দাশ ( অক্টোবর ৬, ১৯৮২-মে, ১২, ২০১৫ ) এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। একটি শোষণ-নিপীড়ণহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠণের জন্য মুক্তচিন্তা, ইহজাগতিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও কুসংস্কারবিরোধিতা যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা অতি আবশ্যক তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন গুটিকয়েক মানুষ। অনন্ত বিজয় তাদের মধ্যে একজন।
গত বছর ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ইসলামি জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন মুক্তমনা সম্পাদক, লেখক অভিজিৎ রায়, বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পরে দেশের মুক্ত-চিন্তক’রা নিজেদের জীবনের উপর বিপদের আঁচটা টের পেয়েছিলেন ভালোভাবেই। একদিনে জীবন শংকা, অন্যদিকে বৃদ্ধ অসুস্থ পিতামাতাকে দেখভাল করার মূল দায়িত্ব। নিরাপত্তার জন্য তাই চিঠি লিখেছিলেন কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে। অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার একমাস পেরোতেই হত্যা করা হলো ওয়াশিকুর বাবুকে। বিপদগ্রস্থ লেখকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আইকর্ন’ অনন্ত বিজয় দাশকে ইউরোপের একটি শহরে নিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, শহর খুঁজে পাবার জন্য চেয়েছিলো অনির্দিষ্টকাল। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তমনা একজন সিনিয়র সদস্য অনতিবিলম্বে অনন্তকে স্টকহোমে নিয়ে আসার জন্য সুইডিশ পেনের সাথে যোগাযোগ করেন। ‘আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিবসে’ অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনন্ত বিজয়ের ঠিকানায় আমন্ত্রণ আসে সুইডিশ পেনের পক্ষ থেকে। সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে অনন্ত বিজয় দাশ সুইডেনে ভ্রমণ ভিসার আবেদন করেন। অনন্ত বিজয় দাশের নিরাপত্তাহীনতার কথা বোঝা স্বত্তেও সুইডেন তাকে ভিসা প্রদানে বিরত থাকে। ১২ই মে’র সেই বিভীষিকাময় সকালে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে আনসার বাংলা নামধারী কয়েকটি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত ধর্মান্ধ জঙ্গী। নিপাট ভদ্র, মেধাবী, অত্যন্ত অমায়িক, শান্তিপুর্ণ আলোচনায় বিশ্বাসী ও আগ্রহী মানুষটিকে হত্যা করে চুপ করানো হলো সর্বোচ্চ পাশবিক পন্থায়।
অনন্ত হত্যা মামলায় অগ্রগতি হতাশাব্যাঞ্জক। ধৃত আসামীদের দুজন ইতিমধ্যে এই মামলায় জামিন লাভ করেছে, যদিও মুক্তির পর তাদের ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। মুক্তমনা আবারও মৌলবাদি জঙ্গিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে অনন্ত বিজয় দাশ সহ মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের ওপর হত্যা-হামলার শাস্তি দাবী করছে।
গত বছর ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ইসলামি জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন মুক্তমনা সম্পাদক, লেখক অভিজিৎ রায়, বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পরে দেশের মুক্ত-চিন্তক’রা নিজেদের জীবনের উপর বিপদের আঁচটা টের পেয়েছিলেন ভালোভাবেই। একদিনে জীবন শংকা, অন্যদিকে বৃদ্ধ অসুস্থ পিতামাতাকে দেখভাল করার মূল দায়িত্ব। নিরাপত্তার জন্য তাই চিঠি লিখেছিলেন কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে। অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার একমাস পেরোতেই হত্যা করা হলো ওয়াশিকুর বাবুকে। বিপদগ্রস্থ লেখকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আইকর্ন’ অনন্ত বিজয় দাশকে ইউরোপের একটি শহরে নিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, শহর খুঁজে পাবার জন্য চেয়েছিলো অনির্দিষ্টকাল। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তমনা একজন সিনিয়র সদস্য অনতিবিলম্বে অনন্তকে স্টকহোমে নিয়ে আসার জন্য সুইডিশ পেনের সাথে যোগাযোগ করেন। ‘আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিবসে’ অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনন্ত বিজয়ের ঠিকানায় আমন্ত্রণ আসে সুইডিশ পেনের পক্ষ থেকে। সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে অনন্ত বিজয় দাশ সুইডেনে ভ্রমণ ভিসার আবেদন করেন। অনন্ত বিজয় দাশের নিরাপত্তাহীনতার কথা বোঝা স্বত্তেও সুইডেন তাকে ভিসা প্রদানে বিরত থাকে। ১২ই মে’র সেই বিভীষিকাময় সকালে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে আনসার বাংলা নামধারী কয়েকটি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত ধর্মান্ধ জঙ্গী। নিপাট ভদ্র, মেধাবী, অত্যন্ত অমায়িক, শান্তিপুর্ণ আলোচনায় বিশ্বাসী ও আগ্রহী মানুষটিকে হত্যা করে চুপ করানো হলো সর্বোচ্চ পাশবিক পন্থায়।
অনন্ত হত্যা মামলায় অগ্রগতি হতাশাব্যাঞ্জক। ধৃত আসামীদের দুজন ইতিমধ্যে এই মামলায় জামিন লাভ করেছে, যদিও মুক্তির পর তাদের ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। মুক্তমনা আবারও মৌলবাদি জঙ্গিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে অনন্ত বিজয় দাশ সহ মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের ওপর হত্যা-হামলার শাস্তি দাবী করছে।
আত্মঘাতি বোমা হামলা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :- বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হলো বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস। বিগত মাস তিন এক আগে মঙ্গলবার সকালে ইসলামি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’ সাধারণ মানুষের উপর আত্মঘাতি বোমা হামলা চালায় ভাইরাসে আক্রান্ত সন্ত্রাসীদের দিয়ে। ব্রাসেলসের জাভেনতাম বিমানবন্দনে হামলায় ১৪ জন ও মিলবেক মেট্রো স্টেশনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। আহত হয়েছেন ২০০ জনের অধিক মানুষ।
ব্রাসেলস বিমানবন্দরের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত বহির্গমন লাউঞ্জ, ছবিসূত্র ইন্টারনেট
আত্মঘাতি হামলাকারী সন্দেহভাজনদের ছবি, ছবিসূত্র ইন্টারনেট
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চালর্স মিশেল এই হামলাকে অন্ধ, নৃশংস বর্ণনা
করে আজকের দিনকে কালো দিন বলে আখ্যা দিয়ে বেলজিয়ামের মানুষদের শান্ত এবং
ধৈর্য ধরার জন্য আহবান জানান।
খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত হোসেন আলীকে গলাকেটে হত্যা
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:-বিগত মাস কয়েক আগে মঙ্গলবার কুড়িগ্রামে নিজ
বাসার সামনে জবাই হলো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত হোসেন আলী, গলাকেটে করা হয়েছে হত্যা । সকালে বাসার বাইরে হাঁটার সময় ইসলামী ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশে মোটরসাইকেল আরোহী
তিন জঙ্গী চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে
হাতবোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬
ইউরো ফুটবল উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় ফ্রান্স
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:- ১৯৯৬ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো ইউরোপের ২৪টি দেশের অংশগ্রহণে
অনুষ্ঠিত হবে ইউরোফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৯৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মোট ১৬টি
দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো ইউরোপের এই ফুটবল বিশ্বকাপ।
জমজমাট এই ফুটবল আসরকে ঘিরে পুরো ফ্রান্স
জুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইউরোপ সেরা এই আসরকে বরণ করতে নতুন সাজে
সেজেছেফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ অন্যান্য স্বাগতিক শহরগুলো । এই আসরের
ময়দানী লড়াই উপভোগ করতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেনফুটবলপ্রেমীরা।
রবিবার, ২৯ মে আধুনিক শিল্প সাহিত্য ও
দর্শনের তীর্থস্থান ফ্রান্সে বসছে বিশ্ব ফুটবলের উন্মাদনা সৃষ্টিকারী আসর
‘ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৬’।ইউরোপের সেরা ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোকে নিয়ে
আগামী ১১ জুন মাঠে গড়াচ্ছে আসরটি। টুর্ণামেন্টে এবারই প্রথম সর্বাধিক ২৪টি
দল অংশ নিচ্ছে ।
এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইউরো’র আয়োজন
করতে যাচ্ছে ফরাসিরা। এর আগে ১৯৬০ সালে প্রথম আসরের আয়োজনের পর ১৯৮৪
সালেদ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল ফ্রান্স। গেল ১৪ আসরের
ধারাবাহিকতায় এটি ইউরো ফুটবলের ১৫তম আসর।
উরোতে মাঠের লড়াইয়ে কাঁপন ধরাবে। টুর্নামেন্টের ফরমেট হিসেবে থাকছে গ্রুপ পর্ব, নক আউট পর্ব ও ফাইনাল।
এবারের আসরে বাড়ানো হয়েছে প্রাইজমানিও।
২০১২ সালে পোল্যান্ড-ইউক্রেন যৌথভাবে আয়োজন করে ১৬ দলের ইউরো
চ্যাম্পিয়নশিপ। সেবারপ্রাইজমানি ছিল ১৯৬ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু ফ্রান্সের
আসরে তা বাড়িয়ে ৩০১ মিলিয়ন ইউরো (২১৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড, ৩৩১ মিলিয়ন মার্কিন
ডলার)করা হয়েছে।
এরমধ্যে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলকে দেয়া
হবে আট মিলিয়ন ইউরো। প্রতিটি ম্যাচে জয়ের জন্য পারফরমেন্স বোনাস হিসেবে
রয়েছে অতিরিক্ত একমিলিয়ন ইউরো, গ্রুপ পর্বে প্রতিটি ড্রয়ের জন্য বরাদ্দ
রয়েছে ৫ লক্ষ ইউরো। নক আউট পর্বে পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি দল পাবে দেড়
মিলিয়ন ইউরো,কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য আড়াই মিলিয়ন ইউরো, আর সেমিফাইনালে
পৌছাতে পারলে অতিরিক্ত চার মিলিয়ন ইউরো।
এদিকে ইউরো’র ১৫তম আসরের জন্য এরই মধ্যে
প্রস্তুত করা হয়েছে ফ্রান্সের ১০ নগরীর ১০টি ভেন্যু। ভেন্যুগুলো হলো সেইন্ট
ডেনিস, মার্শেই, লিও,লিল, প্যারিস, বরদিওক্স, সেইন্ট এতিনি, নিস, লেন্স ও
তুলুস। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ও সমাপনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ৮১ হাজার ৩
শত ৩৮ জন দর্শকধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম সেইন্ট ডেনিসে।
১০ জুলাই স্তাদে দি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য
ফাইনালে বিজয়ী দল পাবে আট মিলিয়ন ইউরো ও রানার্স-আপ দল পাবে পাঁচ মিলিয়ন
ইউরো। উয়েফা’র একবিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিরোপা বিজয়ী দল যদি গ্রুপ পর্বে
তিনটি ম্যাচেই জয়ী হয় তবে সব মিলিয়ে তারা ২৭ মিলিয়ন ইউরো আয় করবে যা ২০১২
সালেছিল ২৩.৫ মিলিয়ন ইউরো।
নবী মোহাম্মদ তাঁর চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত অমুসলিম ছিলেন
সাকিব
আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স)
থেকে : আমাদের নবী
মোহাম্মদ তাঁর চল্লিশ বছর বয়স
পর্যন্ত অমুসলিম ছিলেন,
এবং শুধু তিনি নন, তাঁর
বাবা-মাও মুসলিম ছিলেন না।
কারণ তাঁর বাবা মা ইসলাম
ধর্মের সূচনা হওয়ার আগেই মারা
যান। নবী মুসলমান হন যখন
তিনি ইসলাম ধর্মটির
প্রবর্তন করেন তাঁর চল্লিশ বছর
বয়সে’। পাকিস্তানে
শেখ ইউনুস নামের একজন ডাক্তার
ছিলেন, তিনি একবার একটা বক্তৃতায়
বলেছিলেন :
এই সত্য তথ্যের
জন্য শেখ ইউনুসের ফাঁসির আদেশ
হয়েছিল। শেখ ইউনুসের দুর্দশাই প্রমাণ
করে, সাধারণ মুসলমানদের
মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে
জ্ঞান প্রায় নেই বললেই চলে।
ইসলামের
ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি,
লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব
নিয়ে যা বলেছেন, তা খুব
মনগড়া কিছু বলেননি।
মুশকিল হল, অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান
কোরান এবং হাদিস সম্পর্কে খুব
কম জানেন,
এবং ইসলামের ইতিহাসও
তাঁদের পড়া নেই।
ধর্মানুভূতি
নিয়ে আজকাল ধর্মবাজ
মৌলবাদীরা ভীষণ ভালো ব্যবসা করছে।
এই ব্যবসায়
বাংলাদেশে বরাবরই তারা লাভবান হচ্ছে।
যতবারই তারা রাস্তায়
নেমে চিৎকার করে ভিন্ন মতাবলম্বী
কারওর ফাঁসি দাবি করে, জনগণের
সম্পত্তি জ্বালানো পোড়ানো
শুরু করে, ততবারই সরকার তাদের
পক্ষ নিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীকে নির্যাতন শুরু
করে। এতে ধর্মবাজদের
শক্তি শতগুণ বাড়িয়ে
দেওয়া হয় এবং সমাজকে শতবছর
পিছিয়ে দেওয়া হয়। আমার বেলায়
ঠিক এই কাণ্ডই ঘটিয়েছিল সরকার।
মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে
আপোসনীতি অবিকল আগের মতোই আছে।
খালেদা সরকার ফতোয়াবাজ
সন্ত্রাসীদের পক্ষ না
নিয়ে সেদিন যদি ওদের শাস্তির
ব্যবস্থা করতো, তাহলে ওদের শক্তি
এত এতদিনে
এত ভয়ংকর
হতো না। আমিও দেশের ছেলে
দেশে থাকতে পারতাম।
মত প্রকাশের
অধিকার বলে কিছু একটা থাকতো
দেশে। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা
শুধু নয়, সরকারও ক্ষুদ্র স্বার্থে
ভিন্নমতাবলম্বীর গণতান্ত্রিক অধিকার লংঘন করে। ধর্মবাজরা
বুঝতে পারতো এই সরকারের আমলে
ধর্মানুভূতির রাজনীতিতে বড় একটা সুবিধে হবে
না। লতিফ সিদ্দিকীকে
মন্ত্রী পদ থেকে বহিস্কার করা
মানে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের
আগুনে মণকে মণ ঘি ঢেলে
দেওয়া। তাদের অপশক্তি
আবারও বেড়ে যাবে শতগুণ। দেশ
পিছিয়ে যাবে আবারও শতগুণ।
এ কেমন ব্যাপার,
আমাদের ভদ্র হতে হবে, সুবোধ
হতে হবে, পরিমিতিবোধ
থাকতে হবে, যা কিছুই করি
যুক্তি থাকতে হবে, এবং তাদের,
ধর্মে যাদের বিশ্বাস
আছে, বোধ শোধ কিছু না
থাকলেও চলবে, তাদের কাজে যুক্তির
য ও
না থাকলে
চলবে, তাদের উগ্র হলে ক্ষতি
নেই, যে কারও মাথার দাম
ঘোষণা করার অধিকার তাদের আছে,
বর্বর এবং খুনী হওয়ার অধিকার
আছে, কিন্তু আমাদের
সেই অধিকার নেই, আমাদের বলতে
আমি ধর্মমুক্তদের কথা
বলছি। ঈশ্বরে বিশ্বাস
করা লোকেরা ঈশ্বরে
বিশ্বাস না করা লোকদের চেয়ে
সব সমাজেই
বেশি সুযোগ সুবিধে
পায়, যদিও তারা আজ অবধি
তাদের বিশ্বাস যে ঈশ্বরের ওপর
দাঁড়িয়ে আছে, সেই ঈশ্বরের অস্তিত্বেরই
কোনও প্রমাণ দেখাতে
পারেনি।
যে কথাটা তুমি
শুনতে চাও না, সে কথাটি
বলার অধিকারের নামই
বাক স্বাধীনতা। বাক
স্বাধীনতা তাদের দরকার নেই যাদের
মত শুনে
কেউ মনে আঘাত পায় না।
বাক স্বাধীনতার পক্ষে
না থেকে
যখন সরকার বাক স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ
নেয়, তখন নিজের দেশটার ধ্বংস
নিজেই ডেকে আনে।
লতিফ
সিদ্দিকী সম্পর্কে নানারকম
তথ্য প্রকাশ হচ্ছে
আজকাল। মানুষটা নাকি
বড্ড মন্দ ছিলেন। সরকার যখন
কাউকে বিপদে ফেলে, তার বন্ধু
সংখ্যা কমে গিয়ে শূন্যের কোঠায়
চলে আসে। ঠিক আমারও এমন
দশা হয়েছিল। আমাকে
দেশ থেকে বের করার পর
বন্ধু যারা ছিল, হাওয়া হয়ে
গেল। আমার বিরুদ্ধে
নির্বিচারে অপপ্রচারও শুরু হলো। লতিফ সিদ্দিকী
সম্ভবত প্রচুর মন্দ কাজ করেছিলেন।
আমি বলছি না তিনি খুব
ভালো লোক। আমি শুধু তাঁর
নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে কথা বলছি।
আমি লতিফ সিদ্দিকীর
মত প্রকাশের
অধিকারের যতটা পক্ষে, তাঁর বিরোধীদের
মত প্রকাশের
অধিকারের ততটাই পক্ষে।
লতিফ সিদ্দিকীর মত
পছন্দ না হলে তাঁর মতের
বিরুদ্ধে লিখুন, বলুন,
যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করুন তাঁর
মত, কিন্তু তাঁর মাথার দাম
ঘোষণা করা, তাঁকে শারীরিক আক্রমণ
করা, তাঁকে ফাঁসি দেবো, মৃত্যুদণ্ড
দেবো, তাঁকে মেরে ফেলবো, কেটে
ফেলবো, মুণ্ডু ফেলে দেবো – এইসব
বর্বর হুমকির বিপক্ষে
আমি।
সুনামগঞ্জে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
:-একটি মানবিক আবেদনসংবলিত পোস্ট অনেকের ওয়ালে ঠাঁই পেতে দেখা যাচ্ছে। গত
বেশ কয়েকদিন থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় ছবিসহ। সিলেটের সুনামগঞ্জের দুর্গম
আদিবাসিদের মাঝে বন্যায় চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। দেশের অন্যান্য জায়াগায়
ভালো ফসল উতপাদন হলেও সুনামগঞ্জে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ফসল
উতপাদন ব্যহত হয়। ফলে দেখা দেয় খাদ্যাভাব। বোঝাই যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে এই
দুর্যোগ মোকাবেলায় আদিবাসীদের […]
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার পরও যদি কেউ কোপ না খায়, গুলি না খায়, তখন বুঝবো দেশে গণতন্ত্র আছে
সাকিব আহমদ মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :– ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার পরও যদি কেউ হুমকি না পায়, শাস্তি না পায়, কোপ না খায়, গুলি না খায়, তখন বুঝবো দেশে গণতন্ত্র আছে, বাকস্বাধীনতা আছে, মত প্রকাশের অধিকার আছে। সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি আমি।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে যখন একপাল লোক অসৎ উদ্দেশে হেনস্থা করছিল, সরকারি এক প্রতিনিধি এসে ওই লোকগুলোকে শাস্তি না দিয়ে শাস্তি দিলেন শিক্ষককে। শিক্ষককে তাঁর ছাত্র এবং গ্রামবাসীর সামনে কান ধরে ওঠবস করতে হলো। শিক্ষকের এই অপমান, এই লাঞ্ছনা কোনও সুস্থ সচেতন মানুষের ভালো লাগার কথা নয়। অনেকেই কান ধরে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করেছে কিছু শিক্ষার্থী। শিক্ষক শ্যামল কান্তির কাছে জাতির পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছে তারা। নিরীহ নির্দোষ নিরপরাধ মানুষের ওপর লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অন্যায়, অত্যাচার— আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। কিন্তু প্রতিবাদ, প্রতিরোধ খুব একটা চোখে পড়ে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রী, কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে, একটুও নড়ছে না। মন ভরে গেল দৃশ্যটি দেখে। সত্যি বলছি, প্রতিবাদের দৃশ্যের মতো সুন্দর দৃশ্য আর নেই।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এই মিথ্যে অভিযোগে এক ইস্কুলের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে, তাঁকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে বলে, বাংলাদেশের অনেকে আজ প্রতিবাদে মুখর। ব্যাপারটি চমৎকার। কিন্তু চমৎকার এই ব্যাপারটি এটি প্রমাণ করে না যে বাংলাদেশের সকলে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করে।
শুনেছি স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আন্দোলন চলছে। পাঠ্যবইয়ে ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলি রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সংশোধনের দাবিতে সংগঠিত হচ্ছে কওমিপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। এমনকি ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ এবং প্রস্তাবিত ‘শিক্ষা আইন ২০১৬’ বাতিলের দাবি তুলে আন্দোলন করছে এসব সংগঠন। ইতিমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। পাঠ্যবই সংশোধন না হলে আরও তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এসব পাঠ্যবইয়ে যোগ করা হয়েছে ধর্মহীন নাস্তিক ও হিন্দুত্ববাদের দীক্ষা। আশা করি দেশে এখনও ভালো মানুষ আছেন, যাঁরা দেশটাকে বাঁচাবেন, দেশটাকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাবেন।
প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয় সাধারণত ভ্রূণের বেড়ে ওঠায় কোনও ব্যাঘাত ঘটলে। অনেক ক্ষেত্রেই অসহায় মানসিক শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। সাধারণ মানুষের চেয়ে কম প্রতিবন্ধীদের বুদ্ধিশুদ্ধি । নিজেদের কোনও হাত নেই প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধী হওয়ার পেছনে। এ তাদের দোষ নয় যে তারা প্রতিবন্ধী। নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী নয় ওরা। আমরা প্রতিবন্ধীদের করুণা করি, দয়ামায়া করি, দেখভাল করি। ওরা নিরীহ। মানুষের জটিলতা, ঘৃণা, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, খুন খারাবি শিখতে মানসিক প্রতিবন্ধীরা অপারগ। সন্ত্রাসী, খুনি, জঙ্গিদের প্রতিবন্ধী আখ্যা দেওয়া মানে প্রতিবন্ধীদের অপমান করা।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এই সত্য অভিযোগে যখন কাউকে হত্যা করা হয়, যখন কাউকে লাঞ্ছনা করা হয়, তখন যদি দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ করে, অপরাধীদের বিচার হয়, বুঝবো দেশ নিয়ে আশা করার কিছু আছে। বুঝবো দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারকে মানুষ সম্মান করে।
এদিকে একই সময়ে আরও একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। মেহেরপুরের এক ইস্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সেই ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন। মেহেরপুর থেকে নিবন্ধন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন শিক্ষিকা, সঙ্গে এসেছিলেন প্রধান শিক্ষক। কুষ্টিয়া শহরের আল আমিন হোটেলে পাশাপাশি দুটো রুমে তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। পরদিন ভোরবেলায় প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন দেওয়ার নাম করে দরজা খুলতে বললে শিক্ষিকা দরজা খোলেন। প্রধান শিক্ষক তাঁকে বলা নেই কওয়া নেই ধর্ষণ করেন। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে শিক্ষিকাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যান প্রধান শিক্ষক।
নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষকের পক্ষে আজ সারা দেশ দাঁড়িয়েছে। কুষ্টিয়ার প্রধান শিক্ষকের বিপক্ষেও তো সারা দেশের দাঁড়ানো উচিত। কানে ধরে ওঠবস করলেই অসম্মানিত বা অপমানিত বোধ করে মানুষ? ধর্ষণ কি অসম্মান বা অপমান বোধ জাগায় না? নাকি পুরুষের অপমান নারীর অপমানের চেয়ে বড় হয়ে বাজে।
প্রতিবন্ধীরা সন্ত্রাস করে না, খুন করে না, দুর্নীতি করে না, চাঁদাবাজি করে না। সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী; প্রতিবন্ধী নয়। তারা সন্ত্রাসী হয়েছে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নয়। তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসী হলে তাদের সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে রাজনীতি একটা কারণ। সন্ত্রাসীরা জেনে বুঝেই সন্ত্রাসী হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা দোষী। সন্ত্রাসীদের মানসিক প্রতিবন্ধী বলার মানে তাদের নির্দোষ বলা।
একজন প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের বলেছেন, ‘যারা জঙ্গিবাদ করে, দুর্নীতি করে, চাঁদাবাজি করে, খুন করে, সন্ত্রাস করে, তারা প্রতিবন্ধী।’
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে যখন একপাল লোক অসৎ উদ্দেশে হেনস্থা করছিল, সরকারি এক প্রতিনিধি এসে ওই লোকগুলোকে শাস্তি না দিয়ে শাস্তি দিলেন শিক্ষককে। শিক্ষককে তাঁর ছাত্র এবং গ্রামবাসীর সামনে কান ধরে ওঠবস করতে হলো। শিক্ষকের এই অপমান, এই লাঞ্ছনা কোনও সুস্থ সচেতন মানুষের ভালো লাগার কথা নয়। অনেকেই কান ধরে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করেছে কিছু শিক্ষার্থী। শিক্ষক শ্যামল কান্তির কাছে জাতির পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছে তারা। নিরীহ নির্দোষ নিরপরাধ মানুষের ওপর লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অন্যায়, অত্যাচার— আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। কিন্তু প্রতিবাদ, প্রতিরোধ খুব একটা চোখে পড়ে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রী, কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে, একটুও নড়ছে না। মন ভরে গেল দৃশ্যটি দেখে। সত্যি বলছি, প্রতিবাদের দৃশ্যের মতো সুন্দর দৃশ্য আর নেই।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এই মিথ্যে অভিযোগে এক ইস্কুলের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে, তাঁকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে বলে, বাংলাদেশের অনেকে আজ প্রতিবাদে মুখর। ব্যাপারটি চমৎকার। কিন্তু চমৎকার এই ব্যাপারটি এটি প্রমাণ করে না যে বাংলাদেশের সকলে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করে।
শুনেছি স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আন্দোলন চলছে। পাঠ্যবইয়ে ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলি রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সংশোধনের দাবিতে সংগঠিত হচ্ছে কওমিপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। এমনকি ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ এবং প্রস্তাবিত ‘শিক্ষা আইন ২০১৬’ বাতিলের দাবি তুলে আন্দোলন করছে এসব সংগঠন। ইতিমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। পাঠ্যবই সংশোধন না হলে আরও তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এসব পাঠ্যবইয়ে যোগ করা হয়েছে ধর্মহীন নাস্তিক ও হিন্দুত্ববাদের দীক্ষা। আশা করি দেশে এখনও ভালো মানুষ আছেন, যাঁরা দেশটাকে বাঁচাবেন, দেশটাকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাবেন।
প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয় সাধারণত ভ্রূণের বেড়ে ওঠায় কোনও ব্যাঘাত ঘটলে। অনেক ক্ষেত্রেই অসহায় মানসিক শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। সাধারণ মানুষের চেয়ে কম প্রতিবন্ধীদের বুদ্ধিশুদ্ধি । নিজেদের কোনও হাত নেই প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধী হওয়ার পেছনে। এ তাদের দোষ নয় যে তারা প্রতিবন্ধী। নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী নয় ওরা। আমরা প্রতিবন্ধীদের করুণা করি, দয়ামায়া করি, দেখভাল করি। ওরা নিরীহ। মানুষের জটিলতা, ঘৃণা, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, খুন খারাবি শিখতে মানসিক প্রতিবন্ধীরা অপারগ। সন্ত্রাসী, খুনি, জঙ্গিদের প্রতিবন্ধী আখ্যা দেওয়া মানে প্রতিবন্ধীদের অপমান করা।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এই সত্য অভিযোগে যখন কাউকে হত্যা করা হয়, যখন কাউকে লাঞ্ছনা করা হয়, তখন যদি দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ করে, অপরাধীদের বিচার হয়, বুঝবো দেশ নিয়ে আশা করার কিছু আছে। বুঝবো দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আর মত প্রকাশের অধিকারকে মানুষ সম্মান করে।
এদিকে একই সময়ে আরও একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। মেহেরপুরের এক ইস্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সেই ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন। মেহেরপুর থেকে নিবন্ধন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন শিক্ষিকা, সঙ্গে এসেছিলেন প্রধান শিক্ষক। কুষ্টিয়া শহরের আল আমিন হোটেলে পাশাপাশি দুটো রুমে তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। পরদিন ভোরবেলায় প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন দেওয়ার নাম করে দরজা খুলতে বললে শিক্ষিকা দরজা খোলেন। প্রধান শিক্ষক তাঁকে বলা নেই কওয়া নেই ধর্ষণ করেন। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে শিক্ষিকাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যান প্রধান শিক্ষক।
নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষকের পক্ষে আজ সারা দেশ দাঁড়িয়েছে। কুষ্টিয়ার প্রধান শিক্ষকের বিপক্ষেও তো সারা দেশের দাঁড়ানো উচিত। কানে ধরে ওঠবস করলেই অসম্মানিত বা অপমানিত বোধ করে মানুষ? ধর্ষণ কি অসম্মান বা অপমান বোধ জাগায় না? নাকি পুরুষের অপমান নারীর অপমানের চেয়ে বড় হয়ে বাজে।
প্রতিবন্ধীরা সন্ত্রাস করে না, খুন করে না, দুর্নীতি করে না, চাঁদাবাজি করে না। সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী; প্রতিবন্ধী নয়। তারা সন্ত্রাসী হয়েছে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নয়। তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসী হলে তাদের সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে রাজনীতি একটা কারণ। সন্ত্রাসীরা জেনে বুঝেই সন্ত্রাসী হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা দোষী। সন্ত্রাসীদের মানসিক প্রতিবন্ধী বলার মানে তাদের নির্দোষ বলা।
একজন প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের বলেছেন, ‘যারা জঙ্গিবাদ করে, দুর্নীতি করে, চাঁদাবাজি করে, খুন করে, সন্ত্রাস করে, তারা প্রতিবন্ধী।’
শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬
শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬
জঙ্গিবাদী নাগিনীর দংশনে ক্ষতবিক্ষত
সাকিব আহমদ
মুছা, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে :–আবারও চাপাতির আঘাতে (২০ মে, শুক্রবার) খুন কুষ্টিয়ার হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান। আহত হলেন তার বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান। মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় তারা আক্রমণের শিকার হন।
তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক কাজলের সূত্রে জানা গেল, উভয় ব্যক্তি বাউল ভক্ত এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখতেন। তারা প্রায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। রামকৃষ্ণ মিশনে যেমন যেতেনে তেমনি দেশে কিংবা দেশের বাইরের ধর্মীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন। স্রষ্টার পৃথিবীকে জানার অদম্য বাসনা ছিল তাদের। এ কারণে সময় পেলেই ছুটে যেতেন নানান জায়গায়। লোকায়ত ধর্ম-দর্শন আর আধ্যাত্ম জীবন ছিল তাদের অনুধ্যানের বিষয়। ব্যক্তি জীবনে কারো সঙ্গে তাদের শত্রুতা কিংবা জমি-জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল না। মতাদর্শগত সংঘর্ষও হয়নি কারো সঙ্গে। তাহলে হত্যাকাণ্ড কেন?
ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক, প্রকাশক, হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ধর্মীয় পুরোহিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, ভিন্ন মতের ইসলামী ভাবধারার অনুসারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক বর্বর হামলার সঙ্গে এই চাপাতির কোপের সাদৃশ্য রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যার এই ‘চক্র’ভাঙার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় মিশনগুলোর প্রধানরা ২২ মে বলেছেন, এই ধরনের হামলা চলতে থাকলে তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। এসব হামলা মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রতি ‘নজিরবিহীন হুমকি’তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন তারা। আর এ ধরনের ঘটনা মুক্ত, সহনশীল এবং স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পরিচয় মুছে দিতে পারে।
এসব হামলার অনেকগুলোতে দায় স্বীকার করে আইএস ও আল-কায়েদার নামে বার্তা এলেও সরকার বলছে, অভ্যন্তরীণ জঙ্গিরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের মতে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্ন’ এবং সরকারকে সমস্যায় ফেলতে জামায়াতে ইসলামী ও এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুনের পর থেকে টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল জোয়ারদার হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ৩৭টি হামলার মধ্যে ২৫টি জেএমবি, আটটি আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ও চারটি ঘটনা অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম, আনসারল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল-জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহরির বাংলাদেশ এবং নতুন আবির্ভূত আল মুজাহিদ প্রভৃতি এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত। হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৩৪টিরই মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে দাবি করেন পুলিশপ্রধান। এর মধ্যে মাত্র ছয়টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে ২০১৩ সাল থেকে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর মিল রয়েছে। যারা এসবের শিকারে পরিণত হচ্ছেন, তাদের মধ্যেও বৃহত্তর পরিসরে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তারা হয় ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতাদর্শের বা ভাবধারার অথবা জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে রয়েছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অথবা সাংস্কৃতিকভাবে সক্রিয়। ফলে এটা ধরে নেওয়া খুবই সংগত যে পরিকল্পিতভাবেই এসব ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এসবের পেছনে সংগঠিত শক্তি রয়েছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আজ জঙ্গিবাদী নাগিনীর দংশনে ক্ষতবিক্ষত। খুন করা হয়েছে ৩৭ জনকে, খুনের হুমকি রয়েছে শতাধিক মানুষের মাথার ওপর। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন ব্লগারকে তাদের লেখালেখির কারণে হত্যা করা হলেও ওই মামলাগুলোর খুব বেশি অগ্রগতি নেই।
আহমেদ রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান এবং অনন্ত বিজয় দাশ ও নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় এবং জুলহাস, তনয়, নলিয় অথবা নাজিমের জন্য আমরা এ পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। খুন করেছে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর তরুণ প্রকাশক দীপনকে। অন্যদিকে ব্লগারদের মতো একই কায়দায় একইদিন হামলার শিকার হয়েছেন অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কর্ণধর আহমেদুর রশীদ টুটুল। টুটুলের সঙ্গে আহত হয়েছেন ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসু।
ফেব্রুয়ারিতে(২০১৫) অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর ফেসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে ব্লগার সাংবাদিক সাকিব আহমদ মুছা ছাতক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। উল্লেখ্য, বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর। অভিজিৎ খুনে যেমন ৪/৫ জনের দল পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছিল ঠিক একইভাবে এই হামলাকারীরা ছিল পাঁচজন। তারা ঢুকেই বলেছিল, ‘আমরা টুটুলকে মারতে এসেছি।’ অফিসে ঢুকে কুপিয়ে তালা মেরে চলে গেছে তারা। এসব ক্ষেত্রে নিহতদের দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। প্রত্যেককেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার পরই ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে।
গত বছর (২০১৫) মে মাসে একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা জেনেছি তালিকা ধরে ধরে ব্লগার খুন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে দেওয়া কথিত ‘নাস্তিক তালিকা’অনুযায়ী একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাটি থাকলেও ব্লগারদের নিরাপত্তায় কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের তালিকা’শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। এই ৫৬ জনের মধ্যে আবার ২৭ জনকে আলাদা করা হয়।
জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘বাঁশের কেল্লা’। একই সময়ে সেখানে ৮৪ ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় আগের ৫৬ জনের নামও ছিল। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় রাজিব হায়দার ওরফে শোভনের নাম ছিল। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়। এরও আগে ১৪ জানুয়ারি তালিকায় নাম থাকা আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর পরে অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঠিক একই কায়দায় হত্যা করা হয় মূলত ফেসবুকে লেখালেখি করা ওয়াশিকুর রহমানকে। তবে কোনো তালিকাতেই ওয়াশিকুরের নাম ছিল না। সবশেষে ১২ মে সিলেটে হত্যা করা হয় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় তার নামটি ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর জঙ্গিদের চাপাতি হামলার পর রাজিব হায়দারকে চাপাতির আঘাতে খুন করা হয় ২০১৩ সালে। ব্লগে লেখালেখির কারণে বাংলাদেশে প্রথম কোনো হত্যাকাণ্ড এটি। মুক্তমনা নামে ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কেও গতবছর ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সস্ত্রীক বাংলা একাডেমির বইমেলা দেখে ফেরার পথে চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারান। তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও মারাত্মক আহত হন। অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয় গত ১২ মে, সিলেটে। ঢাকার বাইরে এটাই একমাত্র ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
অনন্ত বাসা থেকে বের হয়ে একটি ব্যাংকে যাবার পথে হামলার শিকার হন। তিনি মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। গত ৭ আগস্ট দুপুরে রাজধানীতে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলকে। ২৫ এপ্রিল(২০১৬) সমকামী মানবাধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব রাব্বি তনয়কে ঢাকার কলাবাগানের এক বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা একদল লোক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তারও আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় আমরা এখন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। যারা এসব ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, পরিকল্পনা পর্যায়ে তাদের চিহ্নিত করা অথবা ঘটনা ঘটে গেলে তাদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ ও নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার আগেই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ আশা করছি। সরকারের মন্ত্রীদের কথা অনুসারে, বাংলাদেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ‘স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ’। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে এবং ‘ঝুঁকিতে’থাকা সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও সরকারের আছে।
‘সহিংসতার এই চক্র’ ভাঙার জন্য পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কর্মসূচি দরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গণতান্ত্রিক আচরণ, জবাবদিহিতা, বাক স্বাধীনতা, শক্তিশালী গণমাধ্যম, সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও চরমপন্থিতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ফলপ্রসূ করার জন্য সকলের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর হতে হবে। সংসদের বাইরে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
যদিও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার যে আহ্বান জানানো হয় তাতে কর্ণপাত করেনি দলটি। তবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাদেরও দায়িত্ব আছে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতাকে প্রত্যাখ্যান করে জনজীবনকে নিরাপদ করতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল সহায়তা করবে এবং জঙ্গিবাদীদের শেকড় উপড়ে ফেলবে- চাপাতির কোপ আজকের এই দিনটি থেকে বন্ধ হোক এই প্রত্যাশা আমাদের। আমরা নির্বিঘ্নে বইয়ের পাতা উল্টাতে চাই এবং মুক্ত বুদ্ধির চর্চায় নিজেকে প্রকাশ করতে চাই নির্ভয়ে।
তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক কাজলের সূত্রে জানা গেল, উভয় ব্যক্তি বাউল ভক্ত এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখতেন। তারা প্রায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। রামকৃষ্ণ মিশনে যেমন যেতেনে তেমনি দেশে কিংবা দেশের বাইরের ধর্মীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন। স্রষ্টার পৃথিবীকে জানার অদম্য বাসনা ছিল তাদের। এ কারণে সময় পেলেই ছুটে যেতেন নানান জায়গায়। লোকায়ত ধর্ম-দর্শন আর আধ্যাত্ম জীবন ছিল তাদের অনুধ্যানের বিষয়। ব্যক্তি জীবনে কারো সঙ্গে তাদের শত্রুতা কিংবা জমি-জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল না। মতাদর্শগত সংঘর্ষও হয়নি কারো সঙ্গে। তাহলে হত্যাকাণ্ড কেন?
ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক, প্রকাশক, হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ধর্মীয় পুরোহিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, ভিন্ন মতের ইসলামী ভাবধারার অনুসারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক বর্বর হামলার সঙ্গে এই চাপাতির কোপের সাদৃশ্য রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যার এই ‘চক্র’ভাঙার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় মিশনগুলোর প্রধানরা ২২ মে বলেছেন, এই ধরনের হামলা চলতে থাকলে তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। এসব হামলা মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রতি ‘নজিরবিহীন হুমকি’তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন তারা। আর এ ধরনের ঘটনা মুক্ত, সহনশীল এবং স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পরিচয় মুছে দিতে পারে।
এসব হামলার অনেকগুলোতে দায় স্বীকার করে আইএস ও আল-কায়েদার নামে বার্তা এলেও সরকার বলছে, অভ্যন্তরীণ জঙ্গিরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের মতে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্ন’ এবং সরকারকে সমস্যায় ফেলতে জামায়াতে ইসলামী ও এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুনের পর থেকে টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল জোয়ারদার হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ৩৭টি হামলার মধ্যে ২৫টি জেএমবি, আটটি আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ও চারটি ঘটনা অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম, আনসারল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল-জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহরির বাংলাদেশ এবং নতুন আবির্ভূত আল মুজাহিদ প্রভৃতি এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত। হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৩৪টিরই মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে দাবি করেন পুলিশপ্রধান। এর মধ্যে মাত্র ছয়টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে ২০১৩ সাল থেকে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর মিল রয়েছে। যারা এসবের শিকারে পরিণত হচ্ছেন, তাদের মধ্যেও বৃহত্তর পরিসরে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তারা হয় ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতাদর্শের বা ভাবধারার অথবা জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে রয়েছে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অথবা সাংস্কৃতিকভাবে সক্রিয়। ফলে এটা ধরে নেওয়া খুবই সংগত যে পরিকল্পিতভাবেই এসব ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এসবের পেছনে সংগঠিত শক্তি রয়েছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আজ জঙ্গিবাদী নাগিনীর দংশনে ক্ষতবিক্ষত। খুন করা হয়েছে ৩৭ জনকে, খুনের হুমকি রয়েছে শতাধিক মানুষের মাথার ওপর। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন ব্লগারকে তাদের লেখালেখির কারণে হত্যা করা হলেও ওই মামলাগুলোর খুব বেশি অগ্রগতি নেই।
আহমেদ রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান এবং অনন্ত বিজয় দাশ ও নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় এবং জুলহাস, তনয়, নলিয় অথবা নাজিমের জন্য আমরা এ পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। খুন করেছে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর তরুণ প্রকাশক দীপনকে। অন্যদিকে ব্লগারদের মতো একই কায়দায় একইদিন হামলার শিকার হয়েছেন অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কর্ণধর আহমেদুর রশীদ টুটুল। টুটুলের সঙ্গে আহত হয়েছেন ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসু।
ফেব্রুয়ারিতে(২০১৫) অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর ফেসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে ব্লগার সাংবাদিক সাকিব আহমদ মুছা ছাতক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। উল্লেখ্য, বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর। অভিজিৎ খুনে যেমন ৪/৫ জনের দল পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছিল ঠিক একইভাবে এই হামলাকারীরা ছিল পাঁচজন। তারা ঢুকেই বলেছিল, ‘আমরা টুটুলকে মারতে এসেছি।’ অফিসে ঢুকে কুপিয়ে তালা মেরে চলে গেছে তারা। এসব ক্ষেত্রে নিহতদের দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। প্রত্যেককেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার পরই ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে।
গত বছর (২০১৫) মে মাসে একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা জেনেছি তালিকা ধরে ধরে ব্লগার খুন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে দেওয়া কথিত ‘নাস্তিক তালিকা’অনুযায়ী একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাটি থাকলেও ব্লগারদের নিরাপত্তায় কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের তালিকা’শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। এই ৫৬ জনের মধ্যে আবার ২৭ জনকে আলাদা করা হয়।
জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘বাঁশের কেল্লা’। একই সময়ে সেখানে ৮৪ ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় আগের ৫৬ জনের নামও ছিল। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় রাজিব হায়দার ওরফে শোভনের নাম ছিল। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়। এরও আগে ১৪ জানুয়ারি তালিকায় নাম থাকা আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর পরে অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঠিক একই কায়দায় হত্যা করা হয় মূলত ফেসবুকে লেখালেখি করা ওয়াশিকুর রহমানকে। তবে কোনো তালিকাতেই ওয়াশিকুরের নাম ছিল না। সবশেষে ১২ মে সিলেটে হত্যা করা হয় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় তার নামটি ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর জঙ্গিদের চাপাতি হামলার পর রাজিব হায়দারকে চাপাতির আঘাতে খুন করা হয় ২০১৩ সালে। ব্লগে লেখালেখির কারণে বাংলাদেশে প্রথম কোনো হত্যাকাণ্ড এটি। মুক্তমনা নামে ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কেও গতবছর ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সস্ত্রীক বাংলা একাডেমির বইমেলা দেখে ফেরার পথে চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারান। তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও মারাত্মক আহত হন। অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয় গত ১২ মে, সিলেটে। ঢাকার বাইরে এটাই একমাত্র ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
অনন্ত বাসা থেকে বের হয়ে একটি ব্যাংকে যাবার পথে হামলার শিকার হন। তিনি মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। গত ৭ আগস্ট দুপুরে রাজধানীতে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলকে। ২৫ এপ্রিল(২০১৬) সমকামী মানবাধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব রাব্বি তনয়কে ঢাকার কলাবাগানের এক বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা একদল লোক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তারও আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় আমরা এখন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। যারা এসব ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, পরিকল্পনা পর্যায়ে তাদের চিহ্নিত করা অথবা ঘটনা ঘটে গেলে তাদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ ও নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার আগেই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ আশা করছি। সরকারের মন্ত্রীদের কথা অনুসারে, বাংলাদেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ‘স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ’। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে এবং ‘ঝুঁকিতে’থাকা সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও সরকারের আছে।
‘সহিংসতার এই চক্র’ ভাঙার জন্য পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কর্মসূচি দরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গণতান্ত্রিক আচরণ, জবাবদিহিতা, বাক স্বাধীনতা, শক্তিশালী গণমাধ্যম, সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও চরমপন্থিতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ফলপ্রসূ করার জন্য সকলের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর হতে হবে। সংসদের বাইরে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
যদিও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার যে আহ্বান জানানো হয় তাতে কর্ণপাত করেনি দলটি। তবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাদেরও দায়িত্ব আছে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতাকে প্রত্যাখ্যান করে জনজীবনকে নিরাপদ করতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল সহায়তা করবে এবং জঙ্গিবাদীদের শেকড় উপড়ে ফেলবে- চাপাতির কোপ আজকের এই দিনটি থেকে বন্ধ হোক এই প্রত্যাশা আমাদের। আমরা নির্বিঘ্নে বইয়ের পাতা উল্টাতে চাই এবং মুক্ত বুদ্ধির চর্চায় নিজেকে প্রকাশ করতে চাই নির্ভয়ে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)