সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব নিয়ে যা বলেছেন

লেখক: সাকিব আহহমদ মুছা লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব নিয়ে যা বলেছেন, তা ইসলামের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি, খুব মনগড়া কিছু বলেননি। মুশকিল হল, অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান কোরান এবং হাদিস সম্পর্কে খুব কম জানেন, এবং ইসলামের ইতিহাসও তাঁদের পড়া নেই। পাকিস্তানে শেখ ইউনুস নামের একজন ডাক্তার ছিলেন, তিনি একবার একটা বক্তৃতায় বলেছিলেন :
আমাদের নবী মুহম্মদ তাঁর চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত অমুসলিম ছিলেন, এবং শুধু তিনি নন, তাঁর বাবা-মাও মুসলিম ছিলেন না। কারণ তাঁর বাবা মা ইসলাম ধর্মের সূচনা হওয়ার আগেই মারা যান। নবী মুসলমান হন যখন তিনি ইসলাম ধর্মটির প্রবর্তন করেন তাঁর চল্লিশ বছর বয়সে
এই সত্য তথ্যের জন্য শেখ ইউনুসের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। শেখ ইউনুসের দুর্দশাই প্রমাণ করে, সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান প্রায় নেই বললেই চলে।
কেমন ব্যাপার, আমাদের ভদ্র হতে হবে, সুবোধ হতে হবে, পরিমিতিবোধ থাকতে হবে, যা কিছুই করি যুক্তি থাকতে হবে, এবং তাদের, ধর্মে যাদের বিশ্বাস আছে, বোধ শোধ কিছু না থাকলেও চলবে, তাদের কাজে যুক্তির না থাকলে চলবে, তাদের উগ্র হলে ক্ষতি নেই, যে কারও মাথার দাম ঘোষণা করার অধিকার তাদের আছে, বর্বর এবং খুনী হওয়ার অধিকার আছে, কিন্তু আমাদের সেই অধিকার নেই, আমাদের বলতে আমি ধর্মমুক্তদের কথা বলছি। ঈশ্বরে বিশ্বাস করা লোকেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা লোকদের চেয়ে সব সমাজেই বেশি সুযোগ সুবিধে পায়, যদিও তারা আজ অবধি তাদের বিশ্বাস যে ঈশ্বরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই ঈশ্বরের অস্তিত্বেরই কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যে কথাটা তুমি শুনতে চাও না, সে কথাটি বলার অধিকারের নামই বাক স্বাধীনতা। বাক স্বাধীনতা তাদের দরকার নেই যাদের মত শুনে কেউ মনে আঘাত পায় না। বাক স্বাধীনতার পক্ষে না থেকে যখন সরকার বাক স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ নেয়, তখন নিজের দেশটার ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে।
ধর্মানুভূতি নিয়ে আজকাল ধর্মবাজ মৌলবাদীরা ভীষণ ভালো ব্যবসা করছে। এই ব্যবসায় বাংলাদেশে বরাবরই তারা লাভবান হচ্ছে। যতবারই তারা রাস্তায় নেমে চিৎকার করে ভিন্ন মতাবলম্বী কারওর ফাঁসি দাবি করে, জনগণের সম্পত্তি জ্বালানো পোড়ানো শুরু করে, ততবারই সরকার তাদের পক্ষ নিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীকে নির্যাতন শুরু করে। এতে ধর্মবাজদের শক্তি শতগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সমাজকে শতবছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। আমার বেলায় ঠিক এই কাণ্ডই ঘটিয়েছিল সরকার। মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোসনীতি অবিকল আগের মতোই আছে। খালেদা সরকার ফতোয়াবাজ সন্ত্রাসীদের পক্ষ না নিয়ে সেদিন যদি ওদের শাস্তির ব্যবস্থা করতো, তাহলে ওদের শক্তি এত এতদিনে এত ভয়ংকর হতো না। আমিও দেশের ছেলে দেশে থাকতে পারতাম। মত প্রকাশের অধিকার বলে কিছু একটা থাকতো দেশে। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা শুধু নয়, সরকারও ক্ষুদ্র স্বার্থে ভিন্নমতাবলম্বীর গণতান্ত্রিক অধিকার লংঘন করে। আজ যদি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা লতিফ সিদ্দিকীকে তাঁর মন্ত্রী পদ থেকে বহিস্কার না করতেন, তবে তিনি দিব্যি দেশে ফিরতে পারতেন। সব তাণ্ডব ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যেতো। চতুর ধর্মবাজরা বুঝতে পারতো এই সরকারের আমলে ধর্মানুভূতির রাজনীতিতে বড় একটা সুবিধে হবে না। লতিফ সিদ্দিকীকে বহিস্কার করা মানে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের আগুনে মণকে মণ ঘি ঢেলে দেওয়া। তাদের অপশক্তি আবারও বেড়ে যাবে শতগুণ। দেশ পিছিয়ে যাবে আবারও শতগুণ।
লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে নানারকম তথ্য প্রকাশ হচ্ছে আজকাল। মানুষটা নাকি বড্ড মন্দ ছিলেন। সরকার যখন কাউকে বিপদে ফেলে, তার বন্ধু সংখ্যা কমে গিয়ে শূন্যের কোঠায় চলে আসে। ঠিক আমারও এমন দশা হয়েছিল। আমাকে দেশ থেকে বের করার পর বন্ধু যারা ছিল, হাওয়া হয়ে গেল। আমার বিরুদ্ধে নির্বিচারে অপপ্রচারও শুরু হলো। লতিফ সিদ্দিকী সম্ভবত প্রচুর মন্দ কাজ করেছিলেন। আমি বলছি না তিনি খুব ভালো লোক। আমি শুধু তাঁর নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে কথা বলছি। আমি লতিফ সিদ্দিকীর মত প্রকাশের অধিকারের যতটা পক্ষে, তাঁর বিরোধীদের মত প্রকাশের অধিকারের ততটাই পক্ষে। লতিফ সিদ্দিকীর মত পছন্দ না হলে তাঁর মতের বিরুদ্ধে লিখুন, বলুন, যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করুন তাঁর মত, কিন্তু তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা, তাঁকে শারীরিক আক্রমণ করা, তাঁকে ফাঁসি দেবো, মৃত্যুদণ্ড দেবো, তাঁকে মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো, মুণ্ডু ফেলে দেবোএইসব বর্বর হুমকির বিপক্ষে আমি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন